পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা אכלס হিতসাধন করিব ? সকল ধর্মই উপদেশ দিতেছে—নি:স্থার্থ হও । কেন নি:স্বার্থ হইব ?—কারণ কোন দেবতা ইহা বলিয়া গিয়াছেন। দেবতার কথায় আমার প্রয়োজন কি ? শাস্ত্রে ইহা বলিয়া গিয়াছে ; শাস্ত্রে বলুর্ক, না আমি উহা মানিতে যাইব কেন ? আর ধর, কতকগুলি লোক ঐ শাস্ত্র বা ঈশ্বরের দোহাই শুনিয়া নীতিপরায়ণ হইল— তাহাতেই বা কি! জগতের অধিকাংশ লোকের নীতি—'চাচা আপন বাচা ; তাই বলিতেছি—আমি যে নীতিপরায়ণ হইব, ইহার যুক্তি দেখাও। অদ্বৈতবাদ ব্যতীত ইহা ব্যাখ্যা করিবার উপায় নাই । সমং পশুন হি সর্বত্র সমবস্থিতমীশ্বরম। ন হিনস্তাত্মানাত্মানং ততো যাতি পরাং গতিম ॥১ —অর্থাং ঈশ্বরকে সর্বত্র সমভাবে অবস্থিত দেখিয়া সেই সমদৰ্শী নিজে নিজেকে হিংসা করে না । সেই জন্য তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন। অদ্বৈতবাদ শিক্ষা করিয়া অবগত হও যে, অপরকে হিংসা করিতে গিয়া তুমি নিজেকেই হিংসা করিতেছ—কারণ তাহারা সকলেই যে তুমি ! তুমি জানো আর নাই জানে, সকল হাত দিয়া তুমি কাজ করিতেছ, সকল পা দিয়া তুমি চলিতেছ, তুমিই রাজারূপে প্রাসাদে সুখসম্ভোগ করিতেছ, আবার তুমিই রাস্তার ভিখারীরূপে দুঃখের জীবন যাপন করিতেছ। অজ্ঞ ব্যক্তিতেও তুমি, বিদ্বানেও তুমি, দুবলের মধ্যেও তুমি, সবলের মধ্যেও তুমি । এই তত্ত্ব অবগত হইয়া সকলের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হও। যেহেতু অপরকে হিংসা করিলে নিজেকে হিংসা করা হয়, সেই জন্য কখনও অন্যকে হিংসা করা উচিত নহে । সেইজন্যই যদি আমি না খাইয়া মরিয়া যাই, তাহাও আমি গ্রাহ করি না, কারণ আমি যখন শুকাইয়া মরিতেছি, তখন আমার লক্ষ লক্ষ মুখে আমিই অহার করিতেছি। অতএব এই ক্ষুদ্র ‘আমি আমার সম্পৰ্কীয় বিষয় গ্রাহের মধ্যেই আনা উচিত নয়, কারণ সমগ্র জগৎই আমার, আমি যুগপৎ জগতের সকল আনন্দ সম্ভোগ করিতেছি । আমাকে ও জগৎকে কে বিনাশ করিতে পারে ? কাজেই দেখিতেছ, অদ্বৈতবাদই নীতি ভত্ত্বের একমাত্র ভিত্তি, একমাত্র ব্যাখ্যা । অন্যান্য মতবাদ তোমাদিগকে নীতিশিক্ষা দিতে পারে, কিন্তু কেন নীতিপরায়ণ ১ গীতা, ১৩২৮