পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খেতড়ি-বক্তৃতা—বেদাস্ত 84כל সম্বন্ধ কখনই ছিন্ন করিতে পারে না। মূল শরীরের ন্যায় এই দ্বিতীয় শরীরেরও ক্ষুধাতৃষ্ণা প্রভূতি বৃত্তিতে র্তাহারা বিশ্বাসী ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্বাসও ছিল যে, মূল দেহটিতে কোনরূপ আঘাত করিলে ‘দ্বিতীয়টিও আহত হইবে। মূল দেহটি নষ্ট হইলে দ্বিতীয়টিও নষ্ট হইবে । এই কারণে মৃতদেহ রক্ষা করিবার প্রথার স্বষ্টি হয়। তাহা হইতেই মমি, সমাধিমন্দির প্রভৃতির উৎপত্তি। ইজিপ্ট ও বাবিলন-বাসীরা এবং য়াহুদীগণ আর বেশী অগ্রসর হইতে পারেন নাই, তাহারা আত্মতত্ত্বে পৌছিতে পারেন নাই । এদিকে ম্যাক্সমুলার বলেন, ঋগ্বেদে পিতৃ-উপাসনার সামান্য চিহ্নমাত্রও দেখিতে পাওয়া যায় না। মমিগণ একদৃষ্টে আমাদের দিকে চাহিয়া আছে— সেখানে এই বীভৎস ও ভীষণ দৃশ্ব দেখা যায় না । দেবগণ মানবের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন, উপাস্য ও উপাসকের সম্বন্ধ বেশ সহজ ও স্বাভাবিক | উত্থার মধ্যে কোনরূপ দুঃখের ভাব নাই। উহাতে সরল হাস্তের অভাব নাই । বেদের কথা বলিতে বলিতে আমি যেন দেবতাদের হস্যধ্বনি স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছি । বৈদিক ঋষিগণ হয়তো সম্পূর্ণভাবে তাহদের ভাব ভাষায় প্রকাশ করিতে পারেন নাই, কিন্তু তাহারা ছিলেন হৃদয়বান ও সংস্কৃতিসম্পন্ন, আমরা তাহাদের তুলনায় পশু । অনেক বৈদিক মন্ত্রে আছে—“যেখানে পিতৃগণ বাস করেন, তাহাকে সেই স্থানে লইয়া যাও—যেখানে কোন দুঃখ শোক নাই’ ইত্যাদি । এইরূপে এদেশে এই ভাবের আবির্ভাব হইল যে, যত শীঘ্র শবদেহ দগ্ধ করিয়া ফেলা যায়, ততই ভাল। তাহদের ক্রমশঃ এই ধারণা হইল যে, স্থূলদেহছাড়া একটি স্বস্বতর দেহ আছে ; স্থূলদেহ ত্যাগের পর সূক্ষ্মদেহ এমন এক স্থানে চলিয়া যায়, যেখানে কোন দুঃখ নাই—কেবল আনন্দ। সেমিটক ধর্মে ভয় ও কষ্টের ভাব খুচুর ; ঐ ধর্মের ধারণা এই যে মানুষ ঈশ্বরদর্শন করিলেই মরিবে । কিন্তু প্রাচীন ঋগ্বেদের ভাব এই যে, মানুষ যদি ঈশ্বরকে চাক্ষুষ দেখিতে পায়, তবেই তাহার যথার্থ জীবন আরম্ভ হইবে । ” * প্রশ্ন জিজ্ঞাসত হইতে লাগিল—এই দেবগণ কে ? ইন্দ্র সময়ে সময়ে মানুষকে সাহায্য করিয়া থাকেন। কখন কখন ইন্দ্র অতিরিক্ত সোমপানে মত্ত বলিয়াও বর্ণিত ; স্থানে স্থানে তাহার প্রতি সর্বশক্তিমান সর্বব্যাপী প্রভৃতি বিশেষণও প্রয়োগ করা হইয়াছে। বরুণদেব সম্বন্ধেও এইরূপ নানাবিধ ধারণা