পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বক্তৃতা—বেদান্ত 3 ○ প্রচারিত হইয় থাকে—ভারতে উহা ‘সর্বপ্রাণীর ভ্রাতৃভাব এই আকার ধারণ করিয়াছে। জুতি ক্ষুদ্রতম প্রাণী, এমন কি ক্ষুদ্র পিপীলিকা পর্যন্ত আমার ভাই— তাহারা আমার দেহশ্বরূপ। এবং তু পণ্ডিতৈজ্ঞাত্ব সর্বভূতময় হরিম ইত্যাদি } —এইরূপে পণ্ডিতগণ সেই প্রভুকে সর্বভূতময় জানিয়া সকল প্রাণীকে ঈশ্বরজ্ঞানে :উপাসনা করিবেন। সেই কারণেই ভারতে ইতরপ্রাণী ও দরিদ্রগণের প্রতি এত দয়ার ভাব' বৰ্তমান ; সকল বস্তু সম্বন্ধেই সকল বিষয়েই ঐ দয়ার ভাব । আত্মায় সমুদয় শক্তি বর্তমান, এই মত ভারতের সকল সম্প্রদায়ের ‘ মিলনভূমি । - - স্বভাবতই এইবার আমাদের ঈশ্বরতত্ত্ব-আলোচনার সময় আসিয়াছে। কিন্তু তংপূর্বেই আত্মা’ সঙ্গন্ধে একটি কথা বলিতে চাই । যাহারা ইংরেজী ভাষা চর্চা করেন, "হারা অনেক সময় Sou ও Mind এই দুইটি শব্দে বড় গোলযোগে পড়িয় যান। সংস্কৃত ‘আত্মা ও ইংরেজী ‘Soul' শব্দ সম্পূর্ণ ভিন্নার্থবাচক । আমরা যাহাকে ‘মন’ বলি, পশ্চাত্যের তাহণকে ‘Soui’ বলেন । পাশ্চাত্য দেশে আত্মা সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান কোন কালে ছিল না। প্রায় বিশ বংসর হইল সংস্কৃত দর্শনশাস্বের সাহায্যে ঐ জ্ঞান পাশ্চাত্য দেশে আসিয়াছে । আমাদের এই স্থূল শরীরের পশ্চাতে মন ; কিন্তু মন আত্মা নহে। উহা স্বৰ্ম্ম শরীর—স্বৰ্ম্ম তন্মাত্রায় নির্মিত । উহাই জন্মজন্মান্তরে বিভিন্ন শরীর আশ্রয় করে, উহার পশ্চাতে মানুষের'আত্মা রহিয়াছে। এই ‘আত্মা’ শব্দ Sout বা Mind শব্দের দ্বারা অনূদিত হইতে পারে না –সুতরাং আমাদিগকে সংস্কৃত 'আত্মা অথবা আধুনিক পাfচাত্য দার্শনিকগণের মতানুযায়ী 'self শব্দ ব্যবহার করিতে হইবে । যে শব্দই আমরা ব্যবহার করি না কেন, তাত্মা যে মন ও স্থল-শরীর— উভয় হইতেই পৃথক, এই ধারণাটি মনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে রাপিতে হইবে। আর এই আত্মাই মন বা সূক্ষ্ম শরীরকে সঙ্গে লইয়া এক দেহ হইতে দেহান্তরে গমন করে ; কালে যখন সর্বজ্ঞত্ব ও পূর্ণত্ব লাভ করে, তখন উহার আর জন্মমৃত্যু হয় না—তখন উহা মুক্ত হইয়া যায় ; ইচ্ছা করিলে এই মন ব| সূক্ষ্ম শরীরকে রাপিতেও পারে অথবা উহাকে পরিত্যাগ করিয়া অনন্তকালের জন্য স্বাধীন ও মুক্ত হইয়া যাইতে পারে। মুক্তিই আত্মার লক্ষ্য। ইহাই আমাদের ধর্মের বিশেষত্ব . আমাদের ধর্মেও স্বৰ্গ-নরক আছে, কিন্তু উহারা চিরস্থায়ী নহে । স্বৰ্গ-নরকের