পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা এইরূপ আমাদের ধর্মের ভিতরও এক মহান সামঞ্জস্য আছে। প্রথমত: শাস্তের কথা লইয়া একটু আলোচনা করা যাক। যে-সকল ধর্মের নিজস্ব এক বা বহু শাস্ত্র ছিল, সেই-সকল ধর্ম দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়াছিল" এবং নানাবিধ অত্যাচার সত্ত্বেও এতদিন টিকিয়া রহিয়াছে । গ্রীকধর্মের নানাবিধ সৌন্দর্য থাকিলেও শাস্ত্রের অভাবে উহা লোপ পাইয়া গেল, কিন্তু য়াহুদীধর্ম ওল্ড টেস্টামেণ্টের বলে এখনও অক্ষু4প্রতাপ । হিন্দুধৰ্মও সেইরূপ। উহার শাস্ত্র ‘বেদ’ জগতের সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ । উহার দুইটি ভাগ--কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড । ভারতের সৌভাগ্যেই হউক অথবা দুর্ভাগ্যেই হউক, কর্মকাণ্ড এখন লোপ পাইয়াছে। দাক্ষিণাত্যে কতকগুলি ব্রাহ্মণ মধ্যে মধ্যে ছাগবধ করিয়া যজ্ঞ করিয়া থাকেন, আর বিবাহ-শ্রাদ্ধাদির মস্ত্রে মধ্যে মধ্যে বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ডের আভাস দেখিতে পাওয়া যায়। এখন আর উহাকে পূর্বের মতো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিবার উপায় নাই । কুমারিলভট্ট একবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু অকৃতকার্য হন । তারপর বেদের জ্ঞানকাগু—যাহার নাম উপনিষদ বা বেদান্ত, উহাকেই ‘শ্রীতিশির’ বলা হয়। আর্যগণ যেখানে শ্রীতি উদ্ধত করিতেছেন, সেখানেই দেখা যায় যে, র্তাহার এই উপনিষদ উদ্ধৃত করিতেছেন । এই বেদাস্তের ধর্মই এখন ভারতের ধর্ম। যদি কোন সম্প্রদায় জনগণের মধ্যে নিজ মত দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত দেখিতে ইচ্ছা করে, তবে সেই সম্প্রদায়কে বেদাস্তের দোহাই দিতে হয় । কি দ্বৈতবাদী, কি অদ্বৈতবাদী, সকলকেই তাই করিতে হয় । বৈষ্ণবগণ নিজেদের মত প্রমাণ করিতে গোপালতাপিনী উপনিষদ উদ্ধত করিয়া থাকেন। নিজের মনোমত বচনাবলী না পাইলে কেহ কেহ নূতন উপনিষদ, রচনা পর্যন্ত করিয়া লন। এখন বেদ সম্বন্ধে হিন্দুগণের মত এই যে, উহা কোন পুস্তকবিশেষ বা কাহারও রচনা নহে। উহা ঈশ্বরের অনন্ত জ্ঞানরাশি–কখন ব্যক্ত হয়, কখন বা অব্যক্ত থাকে সায়নাচার্য একস্থলে বলিয়াছেন, “যে বেদেভ্যোহখিলং জগৎ নির্মমে’ —যিনি বেদজ্ঞানের প্রভাবে সমুদয় জগং স্বষ্টি করেন । বেদের রচয়িতা—কেহ কখন দেখে নাই ; সুতরাং উহা কল্পনা করাও অসম্ভব। ঋষিগণ কেবল ঐ-সকল প্রত্যক্ষ করিয়াছেন । ঋষি অর্থাৎ দ্রষ্ট—মন্ত্রদ্রষ্টা, অনাদিকাল হইতে বিদ্যমান বেদ তাহারা সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন মাত্র। . . এই ঋষিগণ কে ? বাৎস্ত}য়ন বলেন, যিনি যথাবিহিত ধর্ম প্রত্যক্ষ উপলব্ধি । করিয়াছেন, তিনি মেচ্ছ হইলেও ঋষি হইতে পারেন। তাই প্রাচীনকালে