পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বক্তৃতা—বেদান্ত રહઃ কল্যাণ বলি, তাহা সেই অনন্ত আনন্দের এক কণামাত্র। ঐ অনন্ত আনন্দই আমাদের লক্ষ্য। আত্মা অনন্তু আনন্দস্বরূপ, উহা লিঙ্গবৰ্জিত। আত্মাতে নরনারী-ভেদ নাই। দেহ সম্বন্ধেই নরনারী-ভেদ। অতএব আত্মাতে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ আরোপ করা ভ্রমমাত্ৰ—শরীর সম্বন্ধেই,উহা সত্য। আত্মার সম্বন্ধে কোনরূপ বয়সও নির্দিষ্ট হইতে পারে না, সেই প্রাচীন পুরুষ সর্বদাই একরূপ । , এই আত্মা কিরূপে সংসারে বদ্ধ হইলেন ? একমাত্র আমাদের শাস্ত্রই ঐ ' প্রশ্নের উত্তর দিয়া থাকেন। অজ্ঞানই বন্ধনের কারণ । আমরা অজ্ঞানেই বদ্ধ হইয়াছি—জ্ঞানেদয়েই উহার নাশ হইবে, জ্ঞানই আমাদিগকে এই অজ্ঞানের পারে লইয়া যাইবে । এই জ্ঞানলাভের উপায় কি ? ভক্তিপূর্বক ঈশ্বরের উপাসনা এবং ভগবানের মন্দিরজ্ঞানে সর্বভূতে প্রেম দ্বারা সেই জ্ঞানলাভ হয়। ঈশ্বরে পরাহুরক্তিবলে জ্ঞানের উদয় হইবে, অজ্ঞান দূরীভূত হইবে, সকল্প বন্ধন খসিয়া যাইবে এবং আত্মা মুক্তিলাভ করিবেন। আমাদের শাস্ত্রে ঈশ্বরের দ্বিবিধ স্বরূপের বিষয় উল্লিখিত হইয়াছে—সগুণ ও নিগুৰ্ণ । সগুণ ঈশ্বর অর্থে সর্বব্যাপী, জগতের স্বষ্টি স্থিতি ও প্রলয়-কর্ত— জগতের শাশ্বত জনক-জননী । তাহার সহিত আমাদের ভেদ নিত্য । মুক্তির অর্থ তাহার সামীপ্য ও সালোক্য-প্রাপ্তি । নিগুণ ব্রহ্মের বর্ণনায় সগুণ ঈশ্বরের প্রতি সচরাচর প্রযুক্ত সর্বপ্রকার বিশেষণ অনাবশ্বক ও অযৌক্তিক বলিয়া পরিত্যক্ত হইয়াছে। সেই নিগুৰ্ণ সর্বব্যাপী পুরুষকে জ্ঞানবান বলা যাইতে পারে না ; কারণ জ্ঞান মনের ধর্ম। র্তাহাকে চিন্তাশীল বলা যাইতে পারে না ; কারণ চিস্ত সসীম জীবের জ্ঞানলাভের উপায়মাত্র । র্তাহাকে বিচারপরায়ণ বলা যাইতে পারে না ; কারণ বিচারও সসীমতা-দুর্বলতার চিহ্নস্বরূপ । তাহাকে স্মৃষ্টিকর্তা বলা যাইতে পারে না ; কারণ বদ্ধ ভিন্ন মুক্ত পুরুষের স্বষ্টিতে প্রবৃত্তি হয় না। তাহার আবার বন্ধন কি ? প্রয়োজন ভিন্ন কেহই কোন কার্য করে না । তাহার আবার প্রয়োজন কি ? অভাব না থাকিলে কেহ কোন কার্য করে না – তাহার আবার অভাব কি ? বেদে তাহার প্রতি স শব্দ প্রযুক্ত হয় নাই । স’ শব্দের দ্বারা নয়, নিগুৰ্ণ ভাব বুঝাইবার জন্য তৎ’ শব্দের দ্বারা তাহার নির্দেশ করা হইয়াছে। ‘সঃ’ শব্দের দ্বারা নির্দিষ্ট হইলে ব্যক্তিবিশেষ বুঝাইত, তাহাতে জীবজগতের সহিত তাহার সম্পূর্ণ পার্থক্য স্বচিত হইত। তাই