পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা نيف ج. নিগুৰ্ণবাচক ‘তৎ’ শব্দের প্রয়োগ করা হইয়াছে, ‘তং’-শব্দবাচ্য নিগুৰ্ণ ব্রহ্ম প্রচারিত হইয়াছে । ইহাকেই অদ্বৈতবাদ বলে । এই নৈর্ব্যক্তিক সত্তার সহিত আমাদের সম্বন্ধ কি ?—ৰ্তাহার সহিত আমরা অভিন্ন। আমরা প্রত্যেকেই সকল জীবের মূল ভিত্তিস্বরূপ সেই সত্তার বিভিন্ন বিকাশমাত্র। যখনই আমরা এই অনন্ত নিগুৰ্ণ সত্ত হইতে আমাদিগকে পৃথক ভাবি, তখনই আমাদের দুঃখের উৎপত্তি ; আর এই অনির্বচনীয় নিগুৰ্ণ সত্তার সহিত আমাদের একত্ব-জ্ঞানেই মুক্তি। সংক্ষেপত: আমাদের শাস্ত্রে আমরা ঈশ্বরের এই দ্বিবিধ ভাবের উল্লেখ দেখিতে পাই । এখানে বলা আবখ্যক যে, নিগুৰ্ণ ব্রহ্মবাদই সর্বপ্রকার নীতিবিজ্ঞানের ভিত্তি । অতি প্রাচীনকাল হইতেই প্রত্যেক জাতির ভিতর এই সত্য প্রচারিত হইয়াছে——সকলকে নিজের মতো ভালবাসিবে । ভারতবর্ষে আবার মতুযু ও ইতর প্রাণীতে কোন প্রভেদ করা হয় নাই, প্রীি-নির্বিশেষে সকলকেই নিজের মতে প্রীতি করিতে উপদেশ দেওয়া হইয়াছে । কিন্তু অপর প্রাণিগণকে নিজের মতো ভালবাসিলে কেন কল্যাণ হইবে, কেহই তাহার কারণ নির্দেশ করেন নাই । একমাত্র নিগুৰ্ণ ব্রহ্মবাদই ইহার কারণ নির্দেশ করিতে সমর্থ । যখন সমৃদয় ব্রহ্মাণ্ডকে এক ও অখণ্ড বলিয়া বোপ করিবে, যখন জানিলে অপরকে ভালবাসিলে নিজেকেই ভালবাসা হইল, তখনই বুঝিবে—অপরের ক্ষতি করিলে নিজেবই ক্ষতি করা হইল , তখনই আমরা বুঝিব, কেন অপরের অনিষ্ট করা উচিত নয় । সুতরাং এই নিগুৰ্ণ ব্রহ্মবাদেই নীতিবিজ্ঞানের মূলতত্ত্বের যুক্তি পাওয়া যায়। অদ্বৈতবাদের কথা বলিতে গিয়া আরও অনেক কথা আসিয়া পড়ে। সগুণ ঈশ্বরে বিশ্বাসবান হইলে হৃদয়ে কি অপূর্ব প্রেমের উচ্ছ্বাস হয়, তাহ আমি জানি। বিভিন্ন সময়ের প্রয়োজন অনুসারে লোকের উপর ভক্তির প্রভাব ও কার্যকারিতার বিষয় আমি বিশেষভাবে অবগত আছি। কিন্তু আমাদের দেশে এখন আর কাদিবার সময় নাই—এখন কিছু বীর্যের আবশ্বক হইয় পড়িয়াছে। এই নিগুৰ্ণ ব্রহ্মে বিশ্বাস হইলে—সর্বপ্রকার কুসংস্কার-বর্জিত হইয৷ ‘আমিই সেই নিগুণ ব্ৰহ্ম’ এই জ্ঞানসহায়ে নিজের পায়ের উপর নিজে দাড়াইলে হৃদয়ে কি অপুর্ব শক্তির বিকাশ হয়, তাহ বলা যায় না! ভয় ?—কাহাকে ভয় ? আমি প্রকৃতির নিয়ম পর্যন্ত গ্রাহ করি না। মৃত্যু আমার নিকট উপহাসের বস্তু। মাহ্য নিজ আত্মার মহিমায় অবস্থিত—সেই আত্মা অনাদি অনন্ত ও অবিনাশী, তাহাকে কোন অস্ত্র