পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বক্তৃতা—বেদাস্ত ২৭ ভেদ করিতে পারে না, অগ্নি দগ্ধ করিতে পারে না, জল গলাইতে পারে না, বায়ু শুষ্ক করিতে পারে না, তিনি অনন্ত জন্মরহিত মৃত্যুহীন, তাহার মহিমার সম্মুখে স্বৰ্য-চন্দ্রসমূহ—এমন কি, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড সিন্ধুতে বিন্দুতুল্য প্রতীয়মান হয়, তাহার মহিমার সম্মুখে দেশকালের অস্তিত্ব বিলীন হইয়া যায়। আমাদিগকে এই মহিমময় আত্মায়ু বিশ্বাসান হইতে হইবে—তবেই বীর্ঘ আসিবে। তুমি যাহা চিন্তা করিবে, তাহাই হইয়া যাইবে। যদি তুমি আপনাকে দুর্বল ভাবে, তবে দুর্বল হইবে ; তেজস্বী ভাবিলে তেজস্ব হইবে। যদি তুমি আপনাকে অপবিত্র ভাবো, তবে তুমি অপবিত্র ; আপনাকে বিশুদ্ধ ভাবিলে বিশুদ্ধই হইবে। অদ্বৈতবাদ আমাদের নিজেকে দুর্বল ভাবিতে শিক্ষা দেয় না, পরন্তু নিজেদের তেজস্ব সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ ভাবিতে উপদেশ দেয় । আমার ভিতরে ঐ ভাব এখুনও প্রকাশিত নাও হইতে পারে, কিন্তু উহা তো আমার ভিতরে রহিয়াছে । আমার মধ্যে সকল জ্ঞান, সকল শক্তি, পূর্ণ পবিত্রতা-ও স্বাধীনতার ভাব বৃষ্টিয়াছে। তবে আমি ঐ-গুলি জীবনে প্রকাশিত করিতে পারি না কেন ? কারণ, উহাতে আমি বিশ্বাস করি না । যদি আমি উহাতে বিশ্বাসী হই, তবে উহ! এখনই প্রকাশিত হইবে—নিশ্চয়ই হইবে। অদ্বৈতবাদ ইহাই শিক্ষা দেয় । আতি শৈশবাবস্থা হইতেই তোমাদের সন্তানগণ তেজস্বী হউক, তাহাদিগকে ‘কোনরূপ দুর্বলত, কোনরূপ বাহ অনুষ্ঠান শিক্ষা দিবার প্রয়োজন নাই। তাহারা তেজস্বী হউক, নিজের পায়ে নিজের দাড়াক,—সাহসী সর্বজয়ী সর্বসহ হউক । সর্বপ্রথমে আহারা আস্থার মহিমা সম্বন্ধে জাহক। এই শিক্ষা বেদান্তে--কেবল বেদান্তেই পাইবে ; অন্যান্য ধর্মের মতে ভক্তি উপাসনা প্রভৃতি সম্বন্ধে অনেক উপদেশ বেদান্তে আছে—যথেষ্ট পরিমাণই আছে ; কিন্তু আমি যে আত্মতৃত্বের কথা বলিতেছি, তাহাই জীবনপ্রদ এবং অতি অপুর্ব । কেবল বেদান্তেই সেই মহান তত্ত্ব নিহিত, যাহা সমগ্র জগতের ভাবরাশিকে আমূল পরিবতিত করিয়া ফেলিবে এবং বিজ্ঞানের সহিত ধর্মের সামঞ্জস্য বিধান করিবে । আমি তোমাদের নিকট আমাদের ধর্মের প্রধান তত্ত্বগুলি বলিলাম। ঐগুলি কিভাবে কার্যে পরিণত করিতে হইবে, এখন সে-সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিব। পূর্বেই বলিয়াছি, ভারতে যে-সকল কারণ বর্তমান, তাহাতে এখানে অনেক সম্প্রদায় থাকিবারই কথা । কার্যতও দেখিতেছি—এখানে অনেক সম্প্রদায় ।