পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ ○○〉 তারপরই এক অন্ধকারময় যুগের কৃষ্ণ যবনিকা—যাহার দীর্ঘ ছায় ক্ষণে ক্ষণে ইতস্তত: প্রসারিত। কখন যুদ্ধের কোলাহল ও আর্তনাদ, কথন ব্যাপক নরহত্যার জনশ্রুতি—সে-কালের এই ছিল পরিস্থিতি, আর তাহার অবসানে এক নূতন অবস্থায় নূতন দৃশ্বের স্বচনা হইয়াছিল। . তখন আর মগধ-সম্রাজ্য নাই। প্রায় সমগ্র উত্তর-ভারতবর্ষ পরস্পরবিবদমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তরাজ-কর্তৃক শাসিত হইতেছে । পুর্বাঞ্চলে ও হিমালয়ের সন্নিহিত কোন কোন প্রদেশে এবং স্বদুর দক্ষিণে ছাড়া সমগ্র ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম তখন লুপ্তপ্রায় । আর সেই পরিস্থিতির মধ্যেই বংশানুক্রমিক পুরোহিত-শক্তির সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রামের পর জাতি জাগিতেছে ; জাগিয়া উঠিয় দেখিল, জাতির জীবন একদিকে বংশগত ব্রাহ্মণের, অন্যদিকে নবযুগের বর্জনশীল সন্ন্যাসীর—এই দ্বিবিধ পৌরোহিত্যের কবলে ; এই সন্ন্যাসি-সম্প্রদায় বৌদ্ধ-সংগঠনী-শক্তির অধিকারী হইলেও বৌদ্ধদের মতে জনসাধারণের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ছিল না । ইহার পর প্রাচীনের ধ্বংসস্তু প হইতেই নবজাগ্ৰত ভারতবর্ষের অভূখিান হইয়াছিল। নিৰ্ভীক রাজপুত-জাতির বীর্যে ও শোণিতের বিনিময়ে সে ভারতবর্ষের জন্ম, মিথিলার সেই ঐতিহাসিক জ্ঞান-কেন্দ্রের নির্মম ক্ষুরধারবুদ্ধি জনৈক ব্রাহ্মণ কর্তৃক সেই নবভারতের স্বরূপ ব্যাখ্যাত ; আচার্য শঙ্কর এবং তাহার সন্ন্যাসি-সম্প্রদায়-প্রবর্তিত এক নূতন দার্শনিক ভাবের দ্বারা সেই ভারত পরিচালিত এবং মালবের সভাকবি ও সভাশিল্পিবৃন্দের সাহিত্য ও শিল্পদ্বার সে-ভারত সৌন্দৰ্য-মণ্ডিত । নবজাগ্রত ভারতের সম্মুখে দায়িত্ব ছিল গুরুতর, সমস্যা ছিল বিরাট, যেসমস্ত পূর্বপুরুষদের সম্মুখেও কখন উপস্থিত হয় নাই । তুলনীয় অবস্থাটি ছিল এই : প্রথম যুগের একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও সংহত জাতি ; একই রক্ত-স্রোত যাহাদের মধ্যে প্রবাহিত, যাহাদের ভাষা এবং সামাজিক আকাজক্ষা-অভিলাষ এবং দুর্লঙ্ঘ্য প্রাকার-বেষ্টনীর অন্তরালে নিজেদের ঐক্য-সংরক্ষণে যাহারা নিয়ত যত্নশীল,—সেই জাতিই বৌদ্ধপ্রাধান্তের কালে বহু ংযোজন ও বিস্তারের ফলে এক বিপুল আয়তন লাভ করিয়াছিল। আবার বর্ণ ভাষা, ধর্মসংস্কার, সামাজিক উচ্চাভিলাষ প্রভৃতি বিপরীত প্রভাবে সেই জাতিই বই বিবদমান গোষ্ঠীতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল। এখুন সেইগুলিকে একটি