পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাফনায় বক্তৃতা—বেদান্ত \う〉 অভিজ্ঞতা আছুে। আমায় বিশ্বাস কর—অন্যান্য দেশে অনেক বড় বড় কথা শুনিতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু এখানে—কেবল এখানেই এমন মানুষ পাওয়া যায়, যিনি ধর্মকে জীবনে পরিণত করিয়াছেন। বড় বড় কথা বলাই ধর্ম নয় ; তোতাপাখিও কথা কয়, আজকাল কলেও কথা বলে ; কিন্তু এমন জীবন দেখাও দেখি, যাহার মধ্যে ত্যাগ আধ্যাত্মিকতা তিতিক্ষণ ও অনন্ত প্রেম বিদ্যমান। এই সকল গুণ থাকিলে তবে তুমি পাৰ্মিক পুরুষ । যখন আমাদের শাস্ত্রে এই-সকল স্বন্দর সুন্দর ভাব রহিয়াছে এবং আমাদের দেশে এমন মহৎ জীবনসমূহ · উদাহরণস্বরূপ রহিয়াছে, তখন যদি আমাদের যোগিশ্রেষ্টগণের হৃদয় ও মস্তিষ্কপ্রস্থত চিস্ত-রত্নগুলি সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হইয়া ধনি-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সকলের সম্পত্তি ন হয়, তবে বড়ই দুঃখের বিষয় । ঐ-সকল তত্ত্ব শুধু ভারতেই প্রচার করিতে হইবে তাহা নহে, সমগ্র জগতে ছড়াইতে হইবে । ইহাই আমাদের 'শ্রেষ্ঠ কর্তব্য । আবি যতই তুমি অপরকে সাহায্য করিতে অগ্রসর হইবে, ততই দেখিবে তুমি নিজেরই কল্যাণ করিতেছ। যদি তোমরা যথার্থই তোমাদের ধর্মকে ভালবাসো, যদি তোমরা যথার্থই তোমাদের দেশকে ভালবাসো, তবে তোমাদিগকে সাধারণের নিকট দুর্বোপ শাস্ত্রাদি হইতে এই রত্বরাজি উদ্ধার করিয়া প্রকৃত উত্তরাপিকারিগণকে দিতে হইবে—এই মহাব্ৰতসাধনে প্রাণপণ করিতে হইবে । সর্বেপরি আমাদিগকে একটি বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। হায় ! শত শত শতাব্দী ধরিয়া আমরা ঘোরতর ঈর্ষাবিষে জর্জরিত হইতেছি—আমর। সর্বদাই পরস্পরকে হিংসা করিতেছি। অমুক কেন আমা অপেক্ষ বড় হইল, আমি কেন তাহ অপেক্ষা বড় হইলাম না—অহরহ আমাদের এই চিন্তা ! এমন কি, ধর্মকর্মেও আমরা এই শ্রেষ্ঠত্বের অভিলাষী—আমরা এমন ঈর্ষার দাস হইয়াছি । ইহা ত্যাগ করিতে হইবে । যদি ভারতে ভয়ানক কোন পাপ রাজত্ব করিতে থাকে, তবে তাহা এই ঈর্ষাপরতা। সকলেই আদেশ করিতে চায়, আদেশপালন করিতে কেহই প্রস্তুত নহে ! প্রথমে আজ্ঞাপালন করিতে শিক্ষা কর, আজ্ঞা দিবার শক্তি আপনা হইতেই আসিবে । সর্বদাই দাস হইতে শিক্ষpকর, তবেই প্রভু হইতে পারিবে। প্রাচীনকালের সেই অদ্ভুত ব্রহ্মচর্যআশ্রমের অভাবেই ইহা ঘটিয়াছে। ঈর্ষাদ্বেষ পরিত্যাগ কর, তবেই তুমি এখনও যে-সব বড় বড় কাজ পড়িয়া রহিয়াছে, তাহা করিতে পরিবে ।