পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের নারী 8 Հ Գ প্রশ্ন : বেশ তো, আপনি কি আপনার দেশের মেয়েদের কথা—তাহাদের রীতিনীতি, শিক্ষা এবং পরিবারে তাহদের স্থান সম্বন্ধে বলিবেন ? - স্বামীজী : নিশ্চয়ই, এগুলি সম্বন্ধে আমি খুব আনন্দের সহিত বলিব । তাহী হইলে আজ আপনারা ভারতীয় নারী সম্বন্ধেই জানিতে ইচ্ছুক, দর্শন বা অন্ত বিষয় নয়, ঠিক তো ? বক্তৃতা প্রথমেই বলিয়া রাখি যে, আমার অনেক কিছু অপুর্ণতা আপনাদের সহ করিতে হইবে, কারণ আমি এমন এক সাধকসম্প্রদায়ভুক্ত, যাহারা বিবাহ করে না । অতএব নারীর সহিত মাতা, জায়া, কন্যা ও ভগিনী প্রভৃতি সম্পর্কে অপরের জ্ঞান যতটা পুর্ণ, আমার ততটা না হওয়াই স্বাভাবিক। তারপর স্মরণ রাথিতে হইবে যে, ভারতবর্ষ একটি বিশাল মহাদেশ—কেবল একটি দেশ নয়, ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতির তুলনায় ইওরোপের জাতিগুলি পরস্পরের নিকটতর এবং অধিকতর সাদৃশু-বিশিষ্ট। আপনার ভারতবর্ষ সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা করিতে পারিবেন, যদি বলি যে, সমগ্র ভারতবর্ষে আটটি বিভিন্ন ভাষা আছে। ঐগুলি বিভিন্ন ভাষা—আঞ্চলিক ভাষামাত্র নয় এবং প্রত্যেকেরই স্বকীয় সাহিত্য আছে। এক হিন্দীই দশ কোটি লোকের ভাষা, বাংলা প্রায় ছয় কোটি লোকের, ইত্যাদি। যে-কোন দুইটি ইওরোপীয় ভাষার মধ্যে যতটা প্রভেদ, তাহা অপেক্ষ চারিটি "উত্তর-ভারতীয় ভাষা ও দক্ষিণ-ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রভেদ অধিকতর । প্রত্যেকটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ; আপনাদের ভাষা ও জাপানী ভাষার মধ্যে যতখানি পার্থক্য, এইগুলির মধ্যেও ততখানি পার্থক্য । আপনারা জানিয়া আশ্চর্য হইবেন যে, যখন আমি দক্ষিণ ভারতে যাই, সেখানে সংস্কৃত বলিতে পারে-এমন লোকের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে ইংরেজীতেই কথা বলিতে হয় । অধিকন্তু ভারতের বিভিন্ন জাতির আচার, রীতি, আহার, পরিচ্ছদ এবং চিন্তাধারাতেও অনেক পার্থক্য আছে । ইহার উপর আবার বর্ণভেদ আছে । প্রত্যেকটি বর্ণ যেন একটি স্বতন্ত্র জাতিবিশেষ। যদি কেহ ভারতবর্ষে বহুদিন বাস করে, তরেই একজনের চালচলন দেখিয়া বলিতে পারিবে, লোকটি কোন বর্ণভুক্ত। আবার বর্ণগুলির ড়িতরও বিভিন্ন আচরণ ও প্রথা বিদ্যমান।