পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: | ৪৩২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা জায়া জননীর পশ্চাতে থাকেন-ছায়ার মতো। স্ত্রীকে মায়ের জীবন অনুকরণ করিতে হইবে । ইহাই তাহার কর্তব্য। জননীই প্রেমের আদর্শ, তিনিই পরিবারকে শাসন করেন, সমগ্র পরিবারটির উপর তাহার অধিকার । ভারতে সন্তান যখন কোন অন্যায় কাজ করে, পিতা তখন তাহকে প্রহার করেন এবং মাতা সর্বদ পিতা ও সন্তানের মাঝখানে আসিয়া দাড়ান। আর এ দেশে ঠিক তাহার বিপরীত। এ দেশে মায়ের কাজ ছেলেকে মারধোর করা, এবং বেচারী। বাবাকে মধ্যস্থ হইতে হয় ৷ লক্ষ্য করুন—আদশের পার্থক্য । বিরূপ সমালোচনা হিসাবে আমি ইহা বলিতেছি না। আপনারা যাহা করেন তাহা ভালই, কিন্তু যুগ যুগ ধরিয়া আমাদের যাহা শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে, তাহাই আমাদের পথ। মাতা সস্তানকে অভিশাপ দিতেছেন—ইহা আপনার কখনও শুনিতে পাইবেন না। মা সর্বদাই ক্ষমা করেন । আমাদের স্বৰ্গস্থ পিতা’র পরিবর্তে আমরা নিরস্তর বলি 'মা' । মাতৃভাব এবং মাতৃ-শব্দ হিন্দু-মনে চিরদিন অনস্ত প্রেমের সহিত জড়িত । আমাদের এই মরজগতে মায়ের ভালবাসাই ঈশ্বর-প্রেমের নিকটতম ! মহাসাধক রামপ্রসাদ বলিয়াছেন ; করুণ। কর, জননি, আমি দুষ্ট ; কিন্তু ‘কুপুত্র যুদ্যপি হয়, কুমাতা কখনও নয়।’ ঐ দেখ হিন্দু জননী । পুত্রবধূ আসে তার কন্যারূপে। বিবাহ হইলে কন্য। পরগৃহে চলিয়া যায়, বিবাহ করিয়া পুত্র আর একটি কন্যা ঘরে আনে এবং পুত্রবধূ কন্যার শূন্তস্থান পূরণ করে। পুত্রবধূকে সেই রাজ-রাজেশ্বরীর অর্থাং স্বামীর মাতার শাসন-ব্যবস্থার ভিতর মানাইয়া লইতে হইবে । আমি তো সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসী কখনও বিবাহ করে না । মনে করুন, আমি যদি বিবাহ করিতাম, এবং আমার স্ত্রী যদি আমার মায়ের অসস্তোষের কারণ হইত, তাহ। হইলে আমিও স্ত্রীর উপর বিরক্ত হইতাম । কেন ? আমি কি আমার মাকে পুজা করি না ? স্বতরাং মায়ের পুত্রবধূও কেন তাহাকে পুজা করিবে না ? যাহাকে আমি পুজা করি, আমার স্ত্রী তাহাকে কেন পুজা করিবে না ? কে সে, যে আমার সহিত রূঢ় ব্যবহার করিয়া আমার মাকেও শাসন করিবে ? তাহাকে অপেক্ষা করিতে হইবে, যতক্ষণ না তাহার নারীত্ব পরিপুর্ণ হয়। এই মাতৃত্বই নারীত্বকে পুর্ণ করে ; মাতৃত্বই নারীর নারীত্ব। এই মাতৃত্ব পর্যন্ত তাহাকে অপেক্ষা করিতে হইবে, ইহার পরই সে সমান অধিকার মাড় করে। তাই হিন্দুর নিকট মাতৃত্বই নারী-জীবনের চরম লক্ষ্য। কিন্তু অহো! আদর্শের কি ।