পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের নারী 886. জগতের কোন শক্তি প্রতিরোধ করিতে পারে নাই, যাহারা তোমাদের ভাষায় সেই ভয়াবহ্ল টার্টার’ শব্দটি রাখিয়া গিয়াছে, সেই মুঘল আক্রমণকারীকে হিন্দু শৈশবেই জানে। হিন্দু তাহার পাঠ শিক্ষা করিয়াছে। আজিকার শিশুদের মতো সে প্রলাপ বকিতে চায় না। হে পাশ্চাত্য জাতি! তোমাদের যাহা বলিবার তাহ বলে। এখন তো তোমাদেরই দিন। বর্তমানকাল শিশুদের প্রলাপ বকিবার কাল । আমরা যাহা শিথিবীর, তাহ শিখিয়াছি। এখন আমরা মৌন । তোমাদের কিছু ধনসম্পদ হইয়াছে, তাই তোমরা আমাদিগকে অবজ্ঞা কর। ভালু, এখন তোমাদেরই দিন। বেশ বেশ, শিশু তোমরা, আধ-আধ কথা বলো—ইহাই হইল হিন্দুর মনোভাব । অসার ফেনায়িত বাক্যের দ্বারা ভগবানকে পাওয়া যায় না। এমন কি মেধাশক্তির সহণয়েও তিনি লভ্য নন। বাহুবলেও তাহণকে লাভ করা যায় না । পরমেশ্বপ্ন তাহারই কাছে আসেন, যিনি বস্তুর গোপন উৎসটি জানেন, যিনি অপর সব কিছুই নশ্বর বলিয়া জানিয়াছেন ; আর কাহারও নিকট তিনি আসেন না । যুগ-যুগাস্তের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়া ভারতবর্ষ শিক্ষা পাইয়াছে। ভারত এখন ভগবানের অভিমুখী । ভারতবর্ষ অনেক ভূল করিয়াছে। তাহার উপর অনেক জঞ্জালের বোঝা স্তুপীকৃত হইয়াছে। তাহাতে কি হইয়াছে ? আবর্জনাপরিষ্কারে, নগর-পরিষ্কারে কি হয় ? উহা কি জীবন দেয় ? যাহাদের সুন্দর প্রতিষ্ঠান আছে, তাহাদেরও মৃত্যু হয়। আর প্রতিষ্ঠানের কথা না বলাই ভাল। ক্ষণভঙ্গুর এই পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠানগুলি–পাচদিন লাগে তাহদের গড়িতে, * আর ষষ্ঠ দিবসে তাহার ধ্বংস হইয়া যায়। এই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি একটিও একাদিক্ৰমে দুই শত বৎসর টিকিয়া থাকিতে পারে না। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলি কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছে। হিন্দু বলে, ‘হঁn, আমরা প্রাচীন জাতিগুলির মৃত্যুর সাক্ষী, নূতন জাতিগুলিরও মৃত্যু দেখিবার জন্য দাড়াইয়া আছি। কারণ আমাদের আদর্শ ইহসংসারের নয়, উর্ধর্বলোকের। তোমার যাহা আদর্শ, তুমি সেইরূপই হইবে ; আদর্শ যদি নশ্বর হয়, পৃথিবীকেন্দ্রিক হয়, জীবনও সেইরূপ হইবে । আদর্শ যদি জড় হয়, তবে তোমরাg জড় হইরে। দেখ! আমাদের আদর্শ আত্মা । সে-ই একমাত্র সৎ-পদার্থ। আত্মা ছাড়া অন্য, কিছুই নাই এবং আমরা আত্মারই মতো চিরজীবী ।