পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o স্বামীজীর বাণী ও রচনা f; কোন প্রকার সংবাদ রাখে না, সংবাদ চাহেও না । পূর্বে আমারও ঐ মতের দিকে একটা ঝোক ছিল ; কিন্তু এখন বুঝিতেছি, কাল্পনিক গবেষণা অথবা ত্বরিতদৃষ্টিতে দেশদর্শকগণের লিখিত পুস্তক-পাঠ অপেক্ষা অভিজ্ঞতা অনেক বেশী শিক্ষাপ্রদ । আমার নিজের অভিজ্ঞতা হইতে আমি এই জ্ঞানলাভ করিয়াছি যে, আমাদের দেশের সাধারণ লোক নির্বোধও নহে অথবা তাহারা যে জগতের ংবাদ লইতে কম ব্যাকুল, তাহাও নহে ; পৃথিবীর অন্যান্য দেশের লোক যেমন সংবাদ-সংগ্রহে আগ্রহান্বিত, ইহারাও সেইরূপ । তবে প্রত্যেক জাতিরই জীবনের এক একটি উদ্দেশ্য আছে । প্রত্যেক জাতিই প্রাকৃতিক নিয়মে কতকগুলি বিশেষত্ব লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছে। সকল জাতি মিলিয় ঘেন এক মহা ঐকতান বাদ্যের স্বষ্টি করিয়াছে—প্রত্যেক জাতিই যেন উহাতে এক একটি পৃথক পৃথক সুর দিতেছে । উহাই তাহার জীবনীশক্তি। উহাই উহার জাতীয় জীবনের মেরুদণ্ড, মূলভিত্তি। আমাদের এই পবিত্র মাতৃভূমির মূলভিত্তি, মেরুদণ্ড বা জীবনকেন্দ্র একমাত্র ধর্ম। অপরে রাজনীতির কথা বলুক, বাণিজ্যবলে অগাধ ধনরাশি উপার্জনের গৌরব, বাণিজ্যনীতির শক্তি ও উহার প্রচার, বাহ স্বাধীনতালাভের অপুর্ব সুখের কথা বলুক। হিন্দু এ-সকল বুঝে না, বুঝিতে চাহেও না । তাহাদের সহিত ধর্ম, ঈশ্বর, আত্মা, মুক্তি –এ-সকল সম্বন্ধে কথা বলুন। আমি আপনাদিগকে নিশ্চয় বলিতেছি, অন্তঃন্য দেশের অনেক তথাকথিত দার্শনিক অপেক্ষ। আমাদের দেশের সামান্য কৃষক পর্যস্ত এ-সকল তত্ত্বসম্বন্ধে অধিকতর অভিজ্ঞ । ভদ্রমহোদয়গণ, আমি আপনাদিগকে বলিয়াছি, এখনও আমাদের জগৎকে শিখাইবার কিছু আছে। এই জন্যই শত শত বর্ষের অত্যাচার এবং প্রায় সহস্র বর্ষের বৈদেশিক শাসনের পীড়নেও এই জাতি এখনও জীবিত রহিয়াছে। এই জাতি এখনও জীবিত, কারণ এপনও এই জাতি ঈশ্বর ও ধর্মরূপ মহারাত্বকে পরিত্যাগ করে নাই । আমাদের এই মাতৃভূমিতে এখনও ধর্ম ও অধ্যাত্মবিদ্যারূপ যে নিঝরিণী বহিতেছে, এখনও তাহ হইতে মহাবন্ত প্রবাহিত হইয়া সমগ্র পৃথিবীকে ভাসাইবে এবং রাজনীতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিদিন নুতনভাবে সমাজগঠনের চেষ্টায় প্রায় অর্ধমৃত হীনদশাগ্রস্ত পাশ্চাত্য ও অন্যান্য জাতিকে নূতন জীবন প্রদান করিবে । নানাবিধ মত-মতাস্তরের বিভিন্ন সুরে ভারতগগন প্রতিধ্বনিত