পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামনাদ অভিনন্দনের উত্তর 8 > হইতেছে সত্য, কোন স্থর ঠিক তালে মানে বাজিতেছে, কোনটি বা বেতালা ; কিন্তু বেশ বুঝা যাইতেছে, উহাদের মধ্যে একটি প্রধান সুর যেন ভৈরবরাগে সপ্তমে উঠিয়া অপরগুলিকে আর শ্রীতিবিবরে পৌছিতে দিতেছে না । ত্যাগের ভরবরাগের নিকট অন্যান্য রাগরাগিণী যেন লজ্জায় মুখ লুকাইয়াছে। ‘বিষয়ান বিষবৎ ত্যজ’—ভারতীয় সকল শাস্ত্রেরই এই কথা, ইহাই সকল শাস্ত্রের মূলতত্ত্ব। দুনিয়া দুদিনের একটা মায়ামাত্র। জীবন তো ক্ষণিক। ইহার পশ্চাতে দূরে –অতি দূরে সেই অনন্ত অপার রাজ্য ; যাও, সেখানে চলিয়া যাও। এ রাজ্য মহাবীর মনীষিগণের হৃদয়জ্যোতিতে উদ্ভাসিত , তাহাব। এই তথাকথিত অনন্ত জগৎকেও একটি ক্ষুদ্র মৃত্তিকাস্তুপ মাত্র জ্ঞান করেন । তাহারা ক্রমশঃ সে রাজ্য ছাড়াইয়া আরও দূরে—দূরতম রাজ্যে চলিয়া যান। কালের-অনন্ত কালেরও অস্তিত্ব সেখানে নাই ; তাহার কালের সীমা ছাড়াইয়া দূরে—অতি দূরে চলিয়া যান । তাহদের পক্ষে দেশেরও অস্তিত্ব নাই – তত্ত্বারা তাহারও পারে ঘাইতে চান । ইহাই ধর্মের গৃঢ়তম রহস্য। প্রকৃতিকে এইরূপে অতিক্রম করিবার চেষ্টা, যেরূপেই হউক—যতই ক্ষতিস্বীকার করিয়া হউক—সাহস করিযt প্রকৃতির অবগুণ্ঠন উন্মুক্ত করিয়া অন্ততঃ একবারও চকিতের মতো সেই দেশকালাতীত সন্তার দশনচেষ্টাই আমাদের জাতির বৈশিষ্ট্য । তোমরা যদি আমাদের জাতিকে উৎসাহ-উদ্দীপনায় মাতাইতে চাও—তাহাদিগকে এই রাজ্যের কোম সুবাদ দাও, তাহারা মাতিয়া উঠিবে। তোমরা তাহাদের নিকট রাজনীতি, সমাজসংস্কার, ধনসঞ্চয়ের উপায়, বাণিজ্যনীতি প্রভৃতি যাহাই বলো না, তাহারা এক কানু দিয়া শুনিবে, অপর কান দিয়া তাহ বাহির হইয়া যাইবে। অতএব পৃথিবীকে তোমাদের এই ধর্ম শিক্ষা দিতে হইবে। এখন প্রশ্ন এই, পৃথিবীর নিকট আমাদের কিছু শিখিবার আছে কি ? সম্ভবত: অপর জাতির নিকট হইতে আমাদিগকে কিছু বহির্বিজ্ঞান শিক্ষা করতে হইবে, কিরূপে সঙ্ঘ গঠন করিয়া পরিচালন করিতে হয়, বিভিন্ন শক্তি প্রণালীবদ্ধভাবে কাজে লাগাইয়া কিরূপে অল্প চেষ্টায় অধিক ফললাভ করিতে হয়, তাহাও শিখিতে হইবে । ত্যাগ আমাদের সকলের লক্ষ্য হইলেও দেশের সকল লোক যতদিন না সম্পূর্ণ ত্যাগ-স্বীকারে সমর্থ হইতেছে, ততদিন সম্ভবতঃ পাশ্চাত্যের নিকট খুবোক্ত বিষয়গুলি কিছু কিছু শিখিতে হইবে । কিন্তু মনে রাখা উচিত – ত্যাগই আমাদের সকলের আদর্শ। যদি কেহ ভারতে ভোগস্থখকেই পরম