পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরমকুডি অভিনন্দনের উত্তর (\రి আসে । এখন প্রশ্ন—এই ভয়ের উদ্ভব কোথা হইতে ? আত্মার স্বরূপজ্ঞানের অভাব হইতেই ভয়ের উদ্ভব। যিনি রাজাধিরাজ, তাহার তুমি উত্তরাধিকারী— তুমি সেই ঈশ্বরের অংশ। শুধু তাহাই নহে, অদ্বৈত মতে তুমিই স্বয়ং ব্রহ্ম— তুমি স্বরূপ ভুলিয়া গিয়া নিজেকে ক্ষুদ্র মানুষ ভাবিতেছ। আমরা স্বরূপ হইতে ভ্রষ্ট হইয়াছি—আমরা ভেদুজ্ঞানে অভিনিবিষ্ট হইয়াছি ; আমি তোমা অপেক্ষা বড়, তুমি আমা অপেক্ষ বড়—আমরা কেবল এই দ্বন্দ্ব করিতেছি।

  • ‘আত্মায় সকল শক্তি নিহিত’--ভারত জগৎকে এই মহাশিক্ষা দিবে। এই তত্ত্ব হৃদয়ে ধারণ কুরিলে তোমার নিকট জগৎ আর একভাবে প্রতিভাত হইবে এবং পূর্বে তুমি নরনারী ও প্রাণীকে যে দৃষ্টিতে দেখিতে, তখন তাহাদিগকে অন্য দৃষ্টিতে দেখিবে। তখন এই পৃথিবী আর দ্বন্দুক্ষেত্ররূপে প্রতীয়মান হইবে না ; তখন আর মনে হইবে না, পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া দুর্বলের উপর বলবানের জয়লাভের জন্য এ পৃথিবীতে নরনারীর জন্ম ; তখন বোধ হইবে এ পৃথিবী আমাদের ক্রীড়াক্ষেত্র ; স্বয়ং ভগবান শিশুর মতো এখানে খেলিতেছেন, আর আমরা তাহার খেলার সঙ্গী, তাহার কাজের সহায়ক । যতই ভয়ানক, যতই বীভৎস মনে হউক—ইহ খেলমাত্র । আমরা ভ্রান্তিবশতঃ এই ক্রীড়াকে একটা ভয়ানক ব্যাপার মনে করিতেছি । আত্মার স্বরূপ জানিতে পারিলে অতি দুর্বল অধঃপতিত হতভাগ্য পাপীর হৃদয়েও আশার সঞ্চার হয় । শাস্ত্র কেবল বলিতেছেন–নিরাশ হইও না ; তুমি যাহাই কর না কেন, তোমার স্বরূপের কখনও পরিবর্তন হয় না ; তুমি কখন তোমার প্রকৃতির পরিবর্তন করিতে পার না, প্রকৃতি কখন প্রকৃতির বিনাশসাধন করিতে পারে না । তোমার প্রকৃতি শুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরিয়া তোমার এই স্বরূপ অব্যক্তভাবে থাকিতে পারে,

. কিন্তু পরিণামে উহা আপন তেজে ফুটিয়া বাহির হইবে। এই কারণেই অদ্ভুৈতবাদ সকলের নিকট আশার বাণী বহন করিয়া আনে, নৈরাষ্ঠের নয়। বেদান্ত কখনও ভয়ে ধর্ম আচরণ করিতে বলে না । বেদান্ত বলে না যে, শয়তান সর্বদা তোমার উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখিতেছে ; যদি তুমি একবার পদস্খলিত হও, অমনিতোমার ঘাড়ে লাফাইয়া পড়িবে! . . বেদান্তে শয়তানের প্রসঙ্গই নাই ; রেদান্ত বলেন, তোমার অদৃষ্ট তোমার নিজের হাতে—তোমার কর্মই তোমার এই শরীর গঠন করিয়াছে অপর কেহ তোমার হইয়া এ শরীর গঠন করে নাই। সেই সর্বব্যাপী ভগবান তোমার