পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর রাণী ও রচনা وة 6 হইবার কোন প্রয়োজন নাই ; এই সামঞ্জস্যপুর্ণ জগতে বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন ভাব লইয়া এক মহাসামঞ্জস্যের সৃষ্টি করিবে । সম্ভবতঃ আমরা বিভিন্ন জাতির এই ঐকতানে আধ্যাত্মিক স্থর বাজাইবার জন্য বিধাতা কর্তৃক নিযুক্ত। আমাদের মহামহিমান্বিত পুর্বপুরুষদের—যাহাদের বংশধর বলিয়া যে-কোন জাতি গৌরব অনুভব করিতে পারে—তাহদের নিকট হইতে উত্তরাধিকারস্থত্রে আমরা যে মহান তত্ত্বরাশি পাইয়াছি, সেগুলি যে আমরা এখনও হারাই নাই, ইহা দেখিয়াই আমার আনন্দ হইতেছে । ইহাতে আমাদের জাতির ভাবী উন্নতি সম্বন্ধে আমার আশা-—শুধু আশ। নয়, দৃঢ় বিশ্বাস হইতেছে। আমার প্রতি যত্বের জন্যই আমার আনন্দ হয় নাই, আমাদের জাতির হৃদয় যে এখনও অটুট রহিয়াছে, ইহাতেই আমার পরমানন্দ এখনও ভারতের জাতীয় হৃদয় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় নাই। ভারত এখনও বাচিয়া আছে ; কে বলে সে মরিয়াছে ? পাশ্চাত্যেরা আমাদিগকে কর্মকুশল দেখিতে চায়, কিন্তু ধর্ম ব্যতীত অন্য বিষয়ে আমাদের জাতীয় চেষ্টা নাই বলিয়া আমরা তাহাদিগকে তাহাদের মনের মতো কর্মকুশলতা দেখাইতে পারি না। যদি কেহ আমাদিগকে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ দেখিতে চায়, সে নিরাশ হইবে ; আমরাও যদি আবার কোন যুদ্ধপ্রিয় জাতিকে আধ্যাত্মিক বিষয়ে সক্রিয় দেখিতে চাই, আমরা ও সেইরূপ নিরাশ হইব । পাশ্চাত্যেরা আসিয়া দেখুক, আমরা তাহাদেরই মতো কর্মশীল ; দেখিয়া যাক, জাতি কিভাবে বাচিয় রহিয়াছে, পুর্বের মতোই প্রাণবন্ত রহিয়াছে। আমরা যে অধঃপতিত হইয়াছি —এই ধারণাই দূর করিয়া দাও । আমাদের জাতীয় জীবনের মূল ভিত্তি যে অক্ষুণ্ণ, তাহাতে আর কোন সদহ নাই। তথাপি আমাকে এখন গোটকতক রূঢ় কথা বলিতে হইবে। আশা করি, আপনার সেগুলি ভাল ভাবেই গ্রহণ করিবেন। এইমাত্র আপনারা অভিযোগ করিলেন যে, ইওরোপীয় জড়বাদ আমাদিগকে একেবারে মাটি করিয়া ফেলিয়াছে। আমি বলি, দোষ শুধু ইওরোপীয়দের নয়, দোষ প্রধানতঃ মাদের। আমরা যখন বৈদাস্তিক, তখন আমাদিগকে সর্বদাই সকল বিষয় ভিতরের দিক হইতে—আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখিবার চেষ্টা করিতে হইবে। আমরা যখন বৈদাস্তিক, তখন নিশ্চয়ই জানি, যদি আমরা নিজের অনিষ্ট নিজের না করি, তবে পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নাই, যাহা আমাদের কোন অনিষ্ট