পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@br স্বামীজীর বাণী ও রচনা প্রথমেই, ঐ যে অর্থহীন বিষয়গুলি লইয়া প্রাচীনকাল হইতেই বাদানুবাদ চলিতেছে, তাহা পরিত্যাগ কর । গত ছয়-সাত শত বৎসর ধরিয়া কি ঘোর অবনতি হইয়াছে দেথ ! বড় বড় কর্ত-ব্যক্তিরা শত শত বর্ষ ধরিয়া এই মহাবিচাবে ব্যস্ত যে, এক ঘটি জল ডানহাতে কি বাহাতে খাইব ; হাত তিনবার ধুইব না চারিবার ; কুলকুচা করিব পচিবার কি ছয়বার ; যাহারা সারা জীবন এইরূপ দুরূহ প্রশ্নসমূহের মীমাংসায় ও এই-সকল তত্ত্ব সম্বন্ধে মহাপাণ্ডিত্যপূর্ণ বড় বড় দর্শন লিখিতে ব্যস্ত, তাহাদিগের নিকট আর কি আশা করিতে পারা যায় ? আমাদের ধর্মটা যে রান্নাঘরে ঢুকিয়া সেইখানেই আবদ্ধ থাকিবে—এইরূপ এক আশঙ্কা রহিয়াছে । আমরা এখন বৈদান্তিকও নই, পৌরাণিকওঁ নই, তান্ত্রিকও নই ; আমরা এখন কেবল ছুংম!গী’, আমাদের ধর্ম এখন রান্নাঘরে । ভাতের হাড়ি আমাদের ঈশ্বর, আর ধর্মমত —“আমায় ছয়ে না, ছয়ে না, আমি মহাপবিত্র !" দি আমাদের দেশে আর এক শতাব্দী ধরিয়া এই ভাব চলে, তবে আমাদের প্রত্যেককেই পাগলা গারদে যাইতে হইবে ! মন যখন জীবনের উচ্চতম তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে চিস্ত করিতে অসমর্থ হয়, তখন ইহা মস্তিষ্কের দুর্বলতার নিশ্চিত লক্ষণ বলিয়া জানিতে হইবে । এই অবস্থায় মৌলিক তত্ত্বেব গবেষণা করিতে মানুষ একেবারে অসমর্থ হয় ; নিজের সমুদয় তেজ, কার্যকরী শক্তি ও চিন্তাশক্তি হারাইয়া ফেলে ; আর যতদূর সম্ভব ক্ষুদ্রতম গণ্ডির মধ্যেই তাহার কার্যক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়, তাহার বাহিরে সৈ আর যাইতে পারে না। প্রথমে এইগুলি একেবারে ছাড়িয়া দিতে হইবে । মহাবীর্যের সহিত কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে হইবে। ঐগুলি বাদ দিলেও যে-ধনভাণ্ডার আমরা পুর্বপুরুষদিগের নিকট উত্তরাধিকারসূত্রে পাইয়াছি, তাহা অফুরস্ত থাকিবে । সমগ্র পৃথিবী যেন এই ধনভাণ্ডার হইতে সাহায্য পাইবার জন্য উৎসুক হইয়া আছে । উহা হইতে ধনরাশি বিতরণ না করিলে সমগ্র পুথিবী ধ্বংস হইবে । অতএব বিতরণে আর বিলম্ব করিও না । ব্যাস বলিয়াছেন, কলিযুগে দানই একমাত্র ধর্ম—তাহার মধ্যে আবার ধর্মদান শ্রেষ্ঠ ; বিদ্যাদান তাহার নিম্নে ; তারপর প্রাণদান ; সর্বনিম্নে অন্নদান । অন্নদান আমরা যথেষ্ট করিয়াছি $ আমাদের ন্যায় দানশীল জাতি আর নাই। এখানে ভিক্ষুকের নিকটও যতক্ষণ পর্যন্ত একখানা রুটি থাকিবে, সে তাহার অর্ধেক দান করিবে। এইরূপ ব্যাপার কেবল ভারতেই দেখিতে পাওয়া যায়। আমরা যথেষ্ট অন্নদান করিয়াছি, এক্ষণে