পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা 3 مكة আর মহাপুরুষগণ আবিভূত হইয়া সমাজকে পুর্বাপেক্ষা ভাল পথে পরিচালিত করিবেন ; সেই যুগের পক্ষে যাহা অত্যাবশ্বক, যাহা ব্যতীত সমাজ বাচিতে পারে না—তাহারা আসিয়া সেই-সকল কর্তব্য ও পথ সমাজকে দেখাইয় দিবেন। এইরূপে আমাদিগকে এই উভয় বিপদ হইতে আত্মরক্ষা করিতে হইবে ; আমি আশা করি, আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেরই একদিকে যেমন উদার ভাব— হৃদয়ের প্রশস্ততা আসিবে অপর কি তেমনি দৃঢ় নিষ্ঠ ও বিশ্বাস থাকিবে ; তাহা হইলেই তোমরা আমার কথার মর্ম বুঝিবে –বুঝিবে আমার উদ্দেশ্য সকলকেই আপনার করিয়া লওয়া, কাহাকেও বর্জন করা নয় । আমি চাই গোড়ার নিষ্ঠাটুকু, ও তাহার সহিত জড়বাদীর উদার ভাব । হৃদয় সমুদ্রবং গভীর অথচ আকাশবং প্রশস্ত হওয়া চাই । আমাদিগকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নতিশীল জাতির মতো উন্নত হইতে হইবে, আবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আবহমানকালের সঞ্চিত সংস্কারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবান হইতে হইবে ; আর হিন্দুই কেবল প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন প্রথার সম্মান করিতে জানে । সহজ কথায় বলি—সর্ব বিষয়েই আমাদিগকে মুখ্য ও গৌণ উভয়ের বিভিন্নতা কোথায়, তাহা শিখিতে হইবে । মুখ্য বিষয়গুলি সর্বকালের জন্য, আর গৌণ তত্ত্বগুলি কোন বিশেষ সময়ের উপযোগী মাত্র । যদি যথা সময়ে সেইগুলির পরিবর্তে অন্ত্য প্রথা প্রবতিত না হয়, তবে সেগুলি দ্বারা নিশ্চয় অনিষ্ট ঘটিয়া থাকে । আমার এ কথা বলিবার উদ্দেশ্য ইহা নয় যে, তোমাদিগকে প্রাচীন আচারপদ্ধতিসমূহের নিন্দ করিতে হইবে । কখনই নহে, অতিশয় কুৎসিত আচারগুলিরও নিন্দ করিও না। নিন্দ কিছুরই করিও না ; এখন যে প্রথাগুলিকে সাক্ষাংসম্বন্ধে অনিষ্টকর বলিয়া বোধ হইতেছে, সেইগুলিই অতীত কালে প্রত্যক্ষভাবে জীবনপ্রদ ছিল । এখন যদি সেগুলিকে উঠাইয় দিতে হয়, তবে উঠাইয়া দিবার সময়ও সেইগুলির নিন্দ করিও না ; বরং উহাদের দ্বারা আমাদের জাতীয় জীবনরক্ষারূপ যে মহৎ কার্য সাধিত হইয়াছে, সেজন্য ঐগুলির প্রশংসা কর—ঐগুলির প্রতি কৃতজ্ঞ হও । আর আমাদিগকে ইহাও স্মরণ রাখিতে হইবে, কোন সেনাপতি বা রাজা কোনকালে আমাদের সমাজের নেতা ছিলেন না, ঋষিগণই চিরকাল আমাদের সমাজের নেতা। ঋষি কাহারা ? তিনিই ঋষি, যিনি ধর্মকে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিয়াছেন, যাহার নিকট ধর্ম কেবল পুথিগত বিদ্যা, বাগ বিতণ্ডা বা তর্কযুক্তি