পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা "לפא জাপানী পাত্র রাখিতেই হইবে । এইরূপ আমাদের কর্তার বা গিন্নীর অনেক কাজ, তার মধ্যে একটু ধৰ্মও চাই—তবেই সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ হইল। এই কারণেই তাহাদের একটু আধটু ধর্ম করা চাই । জগতের অধিকাংশ লোকের জীবনের উদ্দেশু—রাজনীতিক বা সামাজিক উন্নতির চেষ্টা, এক কথায় সংসার । তাহণদের নিকট ঈশ্বর ও ধর্মের প্রয়োজন সংসারেরই একটু সুখবিধানের জন্ত –তাহাদের নিকট ঈশ্বরের প্রয়োজন শুধু এইটুকু। তোমরা কি শোন নাই, গত দুই শত বৎসর যাবৎ কতকগুলি অজ্ঞ অথচ পণ্ডিতৰ্ম্মন্য ব্যক্তির নিকট হইতে ভারতীয় ধর্মের বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ শোনা যাইতেছে যে, ধর্ম দ্বারা সাংসারিক সুখস্বাচ্ছন্দ্য-লাভের সুবিধা হয় না, ‘কাঞ্চন লাভ হয় না, উহ! সমগ্র জাতিকে দস্থ্যতে পরিণত করে না,—বলবানকে গরীবের ঘাড়ে পড়িয় তাহার রক্তপান করিতে সাহায্য করে না ! সত্যই, আমাদের ধর্ম এরূপ করে না । ইহাতে অন্যান্য জাতির সর্বস্ব লুণ্ঠন ও সর্বনাশ করিবার জন্য পদভরে ভূকম্পকারী সৈন্যপ্রেরণের ব্যবস্থা নাই । অতএব তাহারা বলেন—এ ধর্মে আছে কি ? উহ! চলতি কলে শস্য যোগাইয়া কাজ আদায় করিতে জানে না, অথবা উহা দ্বারা শারীরিক শক্তি লাভ হয় না। তবে এ ধর্মে আছে কি ? তাহারা স্বপ্নেও ভাবে না যে, ঐ যুক্তির দ্বারাই আমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় । আমাদের ধর্মে সাংসারিক সুখ হয় না, সুতরাং আমাদের ধর্ম শ্রেষ্ঠ । আমাদের ধর্মই একমাত্র সত্যধর্ম, কারণ আমাদের ধর্ম এই দু-তিন দিনেব ক্ষুদ্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ জগৎকেই জীবনের চরম লক্ষ্য বলে না । এই স্বল্প বিস্তৃত ক্ষুদ্র পৃথিবীতেই আমাদের ধর্মের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ নহে। আমাদের ধর্ম এই জগতের সীমার বাক্টিরে—দূরে, অতি দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ; সেই রাজ্য অতীন্দ্রিয়—সেখানে দেশ নাই, কাল নাই, সংসারের কোলাহল হইতে দূরে, অতি দূরে—সেখানে গেলে আর সংসারের সুখ-দুঃখ স্পর্শ করিতে পারে না, সমগ্র জগৎই সেই মহিমময় ভূম আত্মারূপ মহাসমুদ্রে বিন্দুতুল্য হইয়া যায়। আমাদের ধর্মই সত্য ধর্ম, কারণ ইহা ‘ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা”—এই উপদেশ দিয়া থাকে ; আমাদের ধর্ম বলে—‘কাঞ্চন লোষ্ট্র বা ধূলির তুল্য ; তোমরা যতই ক্ষমতা-লাভ কর না কেন, সবই ক্ষণিক, এমন কি, জীবনধারণই অনেক সময় বিড়ম্বনামাত্র ; এই জন্যই আমাদের ধর্ম সত্য। আমাদের ধর্মই সত্যধর্ম—কারণ সর্বোপরি ইহা ত্যাগ শিক্ষা দেয়। শত শত যুগের সঞ্চিত জ্ঞানবলে দণ্ডায়মান হইয়া উহা আমাদের মহাজ্ঞানী