পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A. স্বামীজীর বাণী ও রচনা আমরা কিন্তু এখানে আর এক সমস্যার মীমাংসায় নিযুক্ত যে কত অল্প জিনিস লইয়া জীবনযাত্রা নির্বাহ কৰা যায় । উভয় জাতির মধ্যে এই সংঘর্ষ ও প্রভেদ এখনও কয়েক শতাব্দী ধরিয়া চলিবে। কিন্তু ইতিহাসে যদি কিছুমাত্র সত্য থাকে, যদি বর্তমান লক্ষণসমূহ দেখিয়া ভবিষ্যৎ অনুমান করা বিন্দুমাত্র সম্ভব হয়, তবে বলা যায়, যাহার স্বল্পের মধ্যে জীবনযাত্র,নির্বাহ করিতে ও কঠোর আত্মসংযম অভ্যাস করিতে চেষ্টা করে, তাহারাষ্ট পরিণামে জয়ী হইবে ; আর যাহার ভোগমুখ ও বিলাসের দিকেই ধাবমান, তাহার! আপাততঃ যতই ‘ তেজস্বী ও বীর্যবান বলিয়া প্রতীয়মান হউক না কেন, পরিণামে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হইবে । মনুষ্যজীবনে, এমন কি জাতীয় জীবনেও সময়ে সময়ে সংসারের উপর বিতৃষ্ণ অত্যস্ত প্রবল হয়। বোধ হয়, সমগ্র পাশ্চাত্যদেশে এইরূপ একটা সংসার-বিরক্তির ভাব আগিয়াছে। পাশ্চাত্যদেশের বড় বড় মনীষিগণ ইতিমধ্যেই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ঐশ্বৰ্য-সম্পদের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা—সবই বৃথা । সেখানকার অধিকাংশ শিক্ষিত নরনারীই তাহদের বাণিজ্য-প্রধান সভ্যতার এই প্রতিযোগিতায়, এই সংঘর্ষে, এই পাশব ভাবে অতিশয় বিরক্ত হইয়া পডিয়াছেন ; তাহারা আশা করিতেছেন—এই অবস্থা পরিবর্তিত হইবে এবং অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থা আসিতেছে। এক শ্রেণীর লোক আছেন, যাহাদের এখনও দৃঢ় ধারণা —রাজনীতিক ও সামাজিক পরিবর্তনই ইওরোপের সমূদর অশুভ-প্রতিকারের একমাত্র উপায়। কিন্তু তাহাদের বড় বড় মনীষীদের মধ্যে অন্য এক আদর্শ বিকাশ লাভ করিতেছে ; তাহারা বুঝিতে পারিয়াছেন, রাজনীতিক বা সামাজিক পরিবর্তন যতই হউক না কেন, মনুষ্যজীবনের দুঃখকষ্ট কিছুতেই দূর হইবে না। কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতিবিধান করিতে পারিলেই সর্বপ্রকার দুঃখকষ্ট ঘুচিবে । যতই শক্তিপ্রয়োগ, যতই শাসনপ্রণালীর পরিবর্তন, যতই আইনের কড়াকড়ি কর না কেন, কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করিতে পারিবে না । মাধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষাই কেবল অসং প্রবৃত্তি পরিবর্তিত করিয়া জাতিকে সংপথে চালিত করিতে পারে। অতএব পাশ্চাত্য জাতিগুলি কিছু নূতন ভাব— কোন নূতন দর্শনের জন্য ব্যগ্র হইয়া পডিয়াছে। তাহার যে-ধর্ম মানে, সেই খৃষ্টধর্ম অনেক বিষয়ে মহৎ ও সুন্দর হইলেও উহার মর্ম র্তাহারা ভাল করিয়া বোঝেন নাই। আর এতদিন তাহারা খৃষ্টধর্মকে যেভাবে বুঝিয়া আসিতেছিলেন,