পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা ويقسيb তাহার প্রত্যেকটি আমাদের প্রাচীন স্মৃতিকারেরা সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর পুর্বেই বলিয়া গিয়াছেন, এবং এখন আমাদের জাতীয় আচার-ব্যবহারে যে-সকল পরিবর্তন ঘটিতেছে এবং ভবিষ্যতে আরও ঘটবে, সেগুলিও তাহারা যথার্থই বুঝিতে পারিয়াছিলেন। তাহারাও জাতিভেদলোপকারী ছিলেন, তবে আধুনিকদিগের মতো নহে। তাহারা জাতিভেদরাহিত্য অর্থে বুঝিতেন না যে, শহরের সব লোক মিলিয়া একত্র মদ্যমাংস আহার করুক, অথবা যত আহাম্মক ও পাগল মিলিয়া যখন যেখানে যাহাকে ইচ্ছ। বিবাহ করুক, আর দেশটাকে একটা পাগল-গারদে পরিণত করুক ; অথবা তাহার। ইহাও বিশ্বাস করিতেন ন! যে, বিধবাগণের পতির সংখ্যানুসারে কোন জাতির উন্নতির পরিমাণ নির্ণয় করিতে হইবে । এরূপ করিয়া উন্নত হইয়াছে— এমন জাতি তে আমি আজ পর্যন্ত দেখি নাই । ব্রাহ্মণই আমাদের পূর্বপুরুষগণের আদর্শ ছিলেন । আমাদের সকল শাস্ত্রেই এই ব্রাহ্মণের আদর্শ চরিত্র উজ্জল বর্ণে চিত্রিত হইয়াছে । ইওরোপের শ্রেষ্ঠ ধর্মাচার্যগণ পর্যন্ত নিজেদের পূর্বপুরুষগণ যে সম্বাস্ত বংশের ছিলেন, ইহা প্রমাণ করিতে সহস্রমূদ্র ব্যয় করিতেছেন, এবং যতক্ষণ না তাহার প্রমাণ করিতে পারেন যে, পর্বতনিবাসী পথিকের সর্বস্ব-লুণ্ঠনকারী কোন ভয়ঙ্কর অত্যাচারী ব্যক্তি র্তাহীদের পূর্বপুরুষ ছিলেন, ততক্ষণ র্তাহারা কিছুতেই শাস্তি পান না। অপর দিকে আবার ভারতের বড় বড় রাজবংশধরগণ কৌপীনধারী অরণ্যবাসী ফলমূলাহারী বেদাধ্যায়ী কোন প্রাচীন ঋষি হইতে তাহাদের বংশের উৎপত্তি—ইহাই প্রমাণ করিতে চেষ্টা করেন। এখানে যদি তুমি কোন প্রাচীন ঋষিকে তোমার পূর্বপুরুষরূপে প্রতিপন্ন করিতে পারে, তবে তুমি উচ্চজ্ঞাতীয় হইলে, নতুবা নতে । সুতরাং আমাদের আভিজাত্যের আদর্শ অন্যান্য জাতি হইতে সম্পূর্ণ পৃথক । আধ্যাত্মিক-সাধনসম্পন্ন ও মহাত্যাগী ব্রাহ্মণই আমাদের আদর্শ। ব্রাহ্মণ আদর্শ আমি কি অর্থে বুঝিতেছি ?—াহাতে ংসারিকতা একেবারে নাই এবং প্রকৃত জ্ঞান প্রচুর পরিমাণে বর্তমান, তাহাই আদর্শ ব্রাহ্মণত্ব । ইহাই হিন্দুজাতির আদর্শ। তোমরা কি শোন নাই যে, শাস্ত্রে লিখিত আছে—ব্রাহ্মণের পক্ষে কোন বিধিনিষেধ নাই, তিনি রাজার শাসনাধীন নহেন, তাহার বধদণ্ড নাই ? এ-কথা সম্পূর্ণ সত্য স্বার্থপর অজ্ঞ ব্যক্তিগণ যে-ভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছে, অবশ্ব সে-ভাবে বুঝিও না ;