পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵԵ- স্বামীজীর বাণী ও রচনা ভুল ধারণ লইয়া যায়। নাবিক, সৈন্য ও বণিকগণ বিদেশে অদ্ভূত অভূত ব্যবহার করিয়া থাকে, নিজেদের দেশে ঐক্কপ করিবার কথা তাহারা স্বপ্নেও ভাবিতে পারে না। এই কারণেই বোধ হয় চীনারা ইওরোপীয় ও মার্কিনগণকে ‘বিদেশী শয়তান’ বলিয়া থাকে। পাশ্চাত্য জীবনের ভাল দিকগুলি দেখিলে তাহারা এরূপ বলিতে পারিত না । স্বতরাং একটি বিষয় আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, আমরা যেন অপরের কর্তব্য বিচার করিতে গিয়া তাহদেরই চোখ দিয়া দেখি, যেন অপর জাতির আচার-ব্যবহার আমাদের নিজেদের মাপকাঠি দিয়া মাপিতে না যাই । আমি বিশ্বজগতের মাপকাঠি নই। আমাকে জগতের সহিত সামঞ্জস্ত রক্ষা করিয়া চলিতে হইবে । সমগ্র জগৎ কখনও আমার ভাবের সহিত মিলিয়া মিশিয়া চলিবে না। অতএব দেখিতেছি, পরিবেশ অকুসারে আমাদের কর্তব্যের ধারা পরিবর্তিত হয় ; কোন বিশেষ সময়ে যাহা আমাদের কর্তব্য, তাহ করাই এ জগতে শ্রেষ্ঠ কর্ম। প্রথমেই যেন আমরা আমাদের জন্মপ্রাপ্ত কর্তব্য অনুসারে কাজ করি ; তারপর সমাজে ও জীবনে আমাদের পদমর্যাদা অনুসারে যাহা কর্তব্য, তাহা করিতে হইবে । মনুষ্য-স্বভাবের একটি বিশেষ দুর্বলতা এই যে, মানুষ কখনই নিজেকে পরীক্ষা করে না। সে মনে করে, সেও রাজার ন্যায় সিংহাসনে বসিবার উপযুক্ত। যদি বা সে উপযুক্ত হয়, তথাপি তাহাকে আগে দেখাইতে হইবে, সে তাহার সামাজিক অবস্থা অকুযায়ী কর্তব্য সম্পন্ন করিয়াছে। তবেই তাহার উপর উচ্চতর কর্তব্যের ভার অর্পিত হইবে। এ সংসারে যখন আমরা আগ্রহ সহকারে কাজ করিতে আরম্ভ করি, তখন প্রকৃতিই আমাদিগকে চারিদিক হইতে আঘাত করে, তাহারই সাহায্যে শীঘ্রই আমরা আমাদের যথার্থ মর্যাদা খুজিয়া পাই, বুঝিতে পারি—কোথায় কাহার স্থান। ষে ষে-কার্ষের উপযুক্ত নয়, সে দীর্ঘকাল সন্তোষজনকভাবে সেই পদে থাকিতে পারে না। সুতরাং প্রকৃতি যেরূপ বিধান করে, ইহার বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করিয়া কোন ফল নাই। ছোট কাজ করিতেছে বলিয়াই ৰে’ একজন নিম্নস্তরের মানুষ, তাহা নয়। শুধু কর্তব্যের প্রকৃতি দেখিয়া কাহারও বিচার করা উচিত নয় ; ষে যেভাবে সেই কর্তব্য নিম্পন্ন করে, তাহ দ্বারাই তাহার বিচার করিতে হইবে।