পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনাসক্তিই পূর্ণ আত্মত্যাগ আমাদের ভিতর হইতে বহির্গত অর্থাৎ আমাদের কায় মন ও বাক্য স্বারা কৃত প্রত্যেক কার্যই যেমন আবার প্রতিক্রিয়ারূপে আমাদের নিকট ফিরিয়া আসে, সেইরূপ আমাদের কার্য অপর ব্যক্তির উপর এবং তাহাদের কার্য আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে । তোমরা হয়তো সকলেই লক্ষ্য করিয়া থাকিবে যে, কেহ যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন সে ক্রমশঃ আরও মন্দ হইতে থাকে এবং যখন সৎকার্য করিতে আরম্ভ করে, তখন তাহার অন্তরাত্মা দিন দিন সবল হইতে সবলতর হইতে থাকে—সর্বদাই ভাল কাজ করিতে প্রবৃত্ত হয়। এক মন আর এক মনের উপর কার্য করে—এই তত্ত্ব ব্যতীত কর্মের প্রভাবের এই শক্তিবৃদ্ধি আর কোন উপায়েই ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে না। পদার্থ-বিজ্ঞান হইতে একটি উপমা গ্রহণ করিলে বলা যায় যে, আমি যখন কোন কর্ম করিতেছি, তখন আমার মন কোন নির্দিষ্ট কম্পনের অবস্থায় রহিয়াছে ; এরূপ অবস্থাপন্ন সকল মনেই আমার মন দ্বারা প্রভাবিত হইবার প্রবণতা আছে। যদি কোন ঘরে একম্বরে বাধা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র থাকে, তাহার একটিতে আঘাত করিলে অপরগুলিরও সেই স্বরে বাজিয়া উঠিবার প্রবণতা হয়তো লক্ষ্য করিয়াছ। এইরূপ যে-সকল মন একস্বরে বাধা, একরূপ চিন্তা তাহীদের উপর সমভাবে কার্য করিবে । অবশু দুরত্ব ও অন্যান্য কারণে চিন্তার প্রভাবের তারতম্য হইবে, কিন্তু মনের প্রভাবিত হইবার সম্ভাবনা সর্বদা থাকিবে । মনে কর, আমি কোন মন্দ কাজ করিতেছি, আমার মন কম্পনের এক বিশেষ স্বরে রহিয়াছে, তাহা হইলে জগতের সেইরূপ কম্পন-বিশিষ্ট সকল মনেই আমার মন দ্বারা প্রভাবিত হইবার সম্ভাবনা থাকিবে । এইরূপে যখন আমি কোন ভাল কাজ করি, তখন আমার মন আর এক স্বরে বাজিতেছে এবং সেই স্বরে বাধা সকল মনই আমার মন দ্বারা প্রভাবিত হইতে পারে। তানশক্তির তারতম্য অনুসারে মনের উপর মনের এই প্রভাব-বিস্তারের শক্তিও কম-বেশী হয়। এই উপমাটি লইয়া আরও একটু অগ্রসর হইলে বুঝা যাইবে যে, আলোকতরঙ্গগুলি যেমন কোন বস্তুতে প্রতিহত হইবার পূর্বে লক্ষ লক্ষ বৎসর শূন্তমার্গে