পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> X > স্বামীজীর বাণী ও রচনা এই-সকল সদসৎ কর্ম পরস্পরের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সম্বদ্ধ। আমরা একটি সীমারেখা টানিয়া বলিতে পারি না—এই কাজটি সম্পূর্ণভাল, আর এইটি সম্পূর্ণ মন্দ। এমন কোন কর্ম নাই, যাহা একই কালে শুভ অশুভ দুইপ্রকার ফলই প্রসব না করে। একটি নিকটের উদাহরণ লওয়া যাক : আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলিতেছি ; তোমাদের মধ্যে হয়তো কেহ কেহ ভাবিতেছে, আমি ভাল কাজ করিতেছি। কিন্তু ঐ একই সময়ে হয়তো আমি বায়ুমণ্ডলস্থ সহস্ৰ সহস্র কীটপু ধ্বংস করিতেছি। এইরূপে আমি কাহারও অনিষ্ট করিতেছি । যখন আমাদের কাজ নিকটস্থ পরিচিত ব্যক্তিদের উপর শুভ প্রভাব বিস্তার করে, তখন আমরা ঐ কাজকে ভাল কাজ বলি। উদাহরণস্বরূপ দেখ, আমার এই বক্তৃতা তোমরা ভাল বলিতে পারে, কীটাণুগুলি কিন্তু তা বলিবে না। কীটাণুগুলিকে তোমরা দেখিতে পাইতেছ না, নিজেদেরই দেখিতে পাইতেছ। তোমাদের উপর আমার কথা বলার প্রভাব প্রত্যক্ষ, কিন্তু কাঁটালুগুলির উপর উহার প্রভাব তত প্রত্যক্ষ নয়। এইরূপে যদি আমরা আমাদের অসৎ কর্মগুলি বিশ্লেষণ করিয়া দেখি, তবে দেখিব— ঐগুলি দ্বারাও হয়তো কোথাও কিছু না কিছু শুভ ফল হইয়াছে। যিনি শুভ কর্মের মধ্যে কিছু অশুভ, আবার অশুভের মধ্যে কিঞ্চিৎ শুভ দেখেন, তিনিই প্রকৃত কর্ম-রহস্য বুঝিয়াছেন।” কিন্তু ইহা হইতে কি সিদ্ধাস্ত করা যায় ? সিদ্ধাস্ত এই যে, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, এমন কোন কার্য হইতে পারে না, যাহা সম্পূর্ণ অপবিত্র —এখানে হিংসা বা অহিংসা এই অর্থে “অপবিত্রতা’ অথবা ‘পবিত্রতা’ গ্রহণ করিতে হইবে । অপরের অনিষ্ট না করিয়া আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসত্যাগ বা জীবনধারণ করিতে পারি না। আমাদের প্রত্যেক অন্নমুষ্টি অপরের মুখ হইতে কাড়িয়া লওয়া। আমরা বাচিয়া জগং জুড়িয়া থাকার দরুনই অপর কতকগুলি প্রাণীর কষ্ট হইতেছে ; হইতে পারে তাহারা মানুষ অথবা প্রাণী অথবা কাঁটাগু, কিন্তু যাহারই হউক না, আমরা কোন-না-কোন প্রাণীর স্থান সঙ্কুচিত করিতেছি, স্থানসঙ্কোচ করিবার কারণ হইয়াছি। এইরূপষ্ট যদি হয়, তবে স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে, কর্মদ্বারা কখনও পূর্ণতা লাভ ১ 'তুলনীয় : গীত, ৪।১৮