পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. S૨ স্বামীজীর বাণী ও রচনা চেষ্টা করিতে গিয়া আমরা নিজেদের ভুলিবার চেষ্টা করিতেছি। এই আত্মবিশ্বতিই আমাদের জীবনে এক প্রধান শিক্ষার বিষয়। মানুষ মুখের মতে মনে করে, স্বার্থপর উপায়ে সে নিজেকে স্থখী করিতে পারে। বহুকাল চেষ্টার পর সে অবশেষে বুঝিতে পারে, প্রকৃত স্থখ স্বার্থপরতার নাশে, এবং সে নিজে ব্যতীত অপর কেহই তাহাকে সুখী করিতে পারে না। পরোপকার-মূলক প্রতিটি কার্য, সহানুভূতি-সূচক প্রতিটি চিন্তা, অপরকে আমরা যেটুকু সাহায্য করি—এরূপ প্রত্যেকটি সৎকার্য আমাদের ক্ষুদ্র *আমি’র গরিমা কমাইতেছে এবং আমাদের ভাবিতে শিখাইতেছে, আমরা অতি সামান্ত, স্বতরাং এগুলি সৎকার্য। এইখানে দেখি, জ্ঞান ভক্তি ও কর্ম একটি ভাবে মিলিত হইয়াছে। সর্বোচ্চ আদর্শ—অনন্তকালের জন্য পূর্ণ আত্মত্যাগ, যেখানে কোন ‘আমি নাই, সব 'তুমি । জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কর্মযোগ মানুষকে ঐ লক্ষ্যেই লইয়া যায়। একজন ধর্মপ্রচারক নিগুণ (ব্যক্তিভাবশূন্ত) ঈশ্বরের কথা শুনিয়া ভয় পাইতে পারেন। তিনি সগুণ ঈশ্বরের উপর জোর দিতে পারেন, নিজের নিজত্ব ও ব্যক্তিত্ব—এগুলির তাৎপর্য তিনি যাহাই বুঝুন—অক্ষুঃ রাখিবার ইচ্ছা করিতে পারেন, কিন্তু তিনি যে নৈতিক আদর্শ অবলম্বন করিয়াছেন, তাহা যদি যথার্থই ভাল হয়, তবে উহা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ব্যতীত আর কোন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না। ইহাষ্ট সমুদয় নীতির ভিত্তি। এই ভাবটি মহন্তে পণ্ডতে বা দেবতায়—সর্বত্র সমভাবে একমাত্র ‘মাপকাঠি’রূপে প্রয়োগ করিতে পারে ; এই আত্মত্যাগষ্ট সমুদয় নীতিপ্রণালীর মধ্যে অনুস্থ্যত একমাত্র মূল তত্ত্ব—ইহাই প্রধান ভাব । এ জগতে অনেক প্রকারের মানুষ দেখিতে পাইবে । প্রথমতঃ দেবপ্রকৃতি মানব—ইহার পূর্ণ আত্মত্যাগী, নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত উৎসগ করিয়৷ পরের উপকার করেন। ইহারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ । যদি কোন দেশে এইরূপ একশত মানুষ থাকেন, সেই দেশের কখনও হতাশ হইবার কোন কারণ নাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে র্তাহীদের সংখ্যা খুব কম। তারপর আছেন সৎ বা সাধু ব্যক্তিগণ—যতক্ষণ নিজেদের কোন ক্ষতি না হয়, ততক্ষণ ইহার লোকের উপকার করেন ; তারপর তৃতীয় শ্রেণীর লোক— ইহার, নিজেদের হিতের জন্য অপরের অনিষ্ট করিয়া থাকে। একজন সংস্কৃত