পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS 8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা আত্মত্যাগ। মানুষে মানুষে দার্শনিক মত ও ধর্মবিষয়ক পদ্ধতি যতই ভিন্ন হউক না কেন, পরার্থে আত্ম-বিসর্জন করিতে প্রস্তুত ব্যক্তির সমক্ষে সমগ্র মানবজাতি সন্ত্রমে ও ভক্তিসহকারে দণ্ডায়মান হয়। এখানে কোনপ্রকার মতবিশ্বাসের প্রশ্নই উঠে না,—এমন কি, যাহার। সর্বপ্রকার ধর্মভাবের বিরোধী, তাহারাও যখন এইরূপ সম্পূর্ণ আত্ম-বিসর্জনের কোন কাজ দেখে, তখন অনুভব করে, এ কাজকে শ্রদ্ধা করিতেই হইবে । তোমরা কি দেখ নাই, খুব গোড়া খ্ৰীষ্টানও যখন এডুইন আর্নল্ডের এশিয়ার আলোক ( Light of Asia ) পাঠ করেন, তখন তিনিও বুদ্ধের প্রতি কেমন শ্রদ্ধাসম্পন্ন হন—যে বুদ্ধ ঈশ্বরের কথা বলেন নাই, আত্মত্যাগ ব্যতীত আর কিছুই প্রচার করেন নাই ? ধর্মান্ধ ব্যক্তি শুধু জানে না যে, তাহার ও যাহাদের সহিত তাহার মত-বিরোধ, তাহাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। উপাদক ভক্ত মনে সর্বদ ঈশ্বরের ভাব এবং চারিদিকে শুভ পরিবেশ রক্ষা করিয়া অবশেষে সেই একই স্থানে উপনীত হন এবং বলেন—“তোমার ইচ্ছ। পূর্ণ হউক । তিনি নিজের জন্য কিছুই রাখেন না। ইহাই আত্মত্যাগ। দার্শনিক জ্ঞানী জ্ঞানের দ্বারা দেখেন, এই আপাতপ্রতীয়মান ‘আমি’ ভ্ৰমমাত্র, এবং সহজেই উহা পরিত্যাগ করেন । ইহাও সেই আত্মত্যাগ । অতএব কর্ম, ভক্তি ও জ্ঞান এখানে মিলিত হইল ; প্রাচীনকালের বড় বড় ধর্মপ্রচারকগণ যে শিথাইয়াছেন "ভগবান জগৎ নন’—তাহার মর্মও এই আত্মত্যাগ । জগৎ এক জিনিস, ভগবান আর এক জিনিস—এই পার্থক্য অতি সত্য। জগং মর্থে তাহারা স্বার্থপরতাকেই লক্ষ্য করিয়াছেন। নিঃস্বর্থতাই ঈশ্বর। এক ব্যক্তি স্বর্ণময় প্রাসাদে সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকিয়াও সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থপর হইতে পারেন। তাহা হইলেই তিনি ঈশ্বরভাবে মগ্ন । আর একজন হয়তে কুটীরে বাস করে, ছিন্ন বসন পরে এবং সংসারে তাহার কিছুই নাই ; তথাপি সে যদি স্বার্থপর হয়, তবে সে প্রচণ্ডভাবে সংসাবে মগ্ন। এখন আমাদের মূলসূত্রগুলির পুনরাবৃত্তি করা যাক। আমরা বলি, ভাল করিতে গেলেই কিছু মন এবং মন্দ করিতে গেলেই তার সঙ্গে কিছু ভাল না করিয়া থাকিতে পারি না। ইহা জানিয়া আমরা কর্ম করিব কিরূপে ? এই তত্ত্বের মীমাংসার চেষ্টায় এই জগতে অনেক সম্প্রদায়ের অভু্যদয় হইগাঁছিলNাহার। অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবে প্রচার করিয়া গিয়াছেন যে, ধীরে ধীরে