পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনাসক্তিই পূর্ণ আত্মত্যাগ }} & আত্মহত্য করাই সংসার হইতে মুক্ত হইবার একমাত্র উপায় ; কারণ জীবনধারণ করিতে গেলেই মাহবকে ছোট ছোট জীবজন্তুর ও বৃক্ষলতার জীবন নষ্ট করিতে হইবে, অথবা কাহারও না কাহারও অনিষ্ট করিতে হইবে। সুতরাং তাহাদের মতে সংসারচক্র হইতে বাহির হইবার একমাত্র উপায়—মৃত্যু। এই মতবাদকে জৈনগণ র্তাহীদের সর্বোচ্চ আদর্শ বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। আপাততঃ এই উপদেশ খুব যুক্তিসঙ্গত বলিয়া বোধ হয়। কিন্তু গীতাতেই ইষ্ঠার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যায়—ইহাই অনাসক্তির তত্ত্ব, জীবনে কাজ করিয়া কিছুতেই আসক্ত না হওয়া । জানিয়া রাখো—যদিও তুমি জগতে বহিয়াছ, তুমি জগৎ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক ; যাহাই কর না কেন, তাহ নিজের জন্য করিতেছ না। নিজের জন্য যে কাজ করিবে, তাহার ফল তোমাকে ভোগ করিতে হইবে । কার্য যদি সৎ হয়, তোমাকে উহার শুভ ফল ভোগ করিতে হইবে, অসৎ হইলে উহার অশুভ ফল ভোগ করিতে হইবে । কিন্তু যে-কোন কাৰ্যই হউক, তাহা যদি তোমার নিজের জন্য কৃত না হয়, তাহা হইলে উহা তোমার উপর কোন প্রভাব বিস্তার করিতে পরিবে না। আমাদের শাস্ত্রে এই ভাবব্যঞ্জক একটি বাক্য পাওয়া যায় : “যদি কাষ্ঠীরও জ্ঞান থাকে যে, আমি ইহা নিজের জন্য করিতেছি না, তবে তিনি সমগ্র জগৎকে হত্য। করিয়াও বা নিজে হত হইয়াও হত্যা করেন না, বা হত হন না।’ এইজন্যই কর্মযোগ আমাদিগকে বিশেষভাবে শিক্ষা দেয, ‘সংসার ত্যাগ করিও না ; সংসারে বাস কর, সংসারের ভাব যত ইচ্ছা গ্রহণ কর ; কিন্তু নিজের স্বখভোগের জন্য কাজ একেবারেই করিও না।’ ভোগ যেন লক্ষ্য না হয়। প্রথমে নিজের ক্ষুদ্র ‘আমি কে মারিয়া ফেল, ভাবপর সমুদয় জগৎকে আপনার করিয়া দেখ, যেমন প্রাচীন খ্ৰীষ্টানেরা বলিতেন, ‘পুরাতন মানুষটিকে মারিয়া ফেলিতে হইবে ।’ ‘পুৰাতন মানুষ’ " 'র অর্থ ; জগৎ আমাদের ভোগের জন্য নির্মিত হইয়াছে—এই স্বার্থপর উলি । অজ্ঞ পিতামাতারা তাহাদের সন্তানদিগকে প্রার্থনা করিতে শেখান, ংে প্রভো, তুমি এই স্বৰ্ষ চন্দ্র আমার জন্য স্থষ্টি করিয়াছ। প্রভূর ধেন এই সব শিশুর জন্য যাবতীয় পদার্থ স্বষ্টি করা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল ১ তুলনীয় ঃ গীতা, ২/২ , কঠ-উপ- ১।২।১৮