পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> \bア স্বামীজীর বাণী ও রচন। যাহা প্রাপ্য ছিল, তুমি তাহাই দিয়াছিলে। তাহার নিজ কর্মের ফলেই সে উহ পাইয়াছে, তোমার কর্ম তোমাকে উহার বাহক করিয়াছিল মাত্র কিছু দান করিয়া তুমি গর্ববোধ করিবে কেন—তুমি তো উহার বাহক মাত্র ? জগৎ নিজ কর্মের দ্বারা উহা লাভ করিবার যোগ্য হইয়াছিল। ইহাতে তোমার অহঙ্কারের কারণ কি ? জগৎকে তুমি যাহা দিতেছ, তাহা এমন একটা বড় কিছু নয়। অনাসক্তির ভাব লাভ করিলে তোমার পক্ষে আর ভাল বা মন্দ বলিয়া কিছুই থাকিবে না। স্বার্থই কেবল ভালমন্দের প্রভেদ করিয়া থাকে। এইটি বুঝা বড় কঠিন, কিন্তু সময়ে বুঝিবে—যতক্ষণ না তুমি শক্তি প্রয়োগ করিতে দাও, ততক্ষণ জগতের কোনকিছুই তোমার উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না। যতক্ষণ না আত্মা অজ্ঞের মতো হইয়া স্বীয় স্বতন্ত্রত হারায়, ততক্ষণ কোন শক্তিই আত্মার উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না , অতএব অনাসক্তির দ্বারা তুমি তোমার উপর কোন কিছুর প্রভাব জয় কর— অস্বীকার কর। কোন জিনিসের তোমার উপর কিছু করিবার অধিকার নাই—এ-কথা বলা খুব সহজ ; কিন্তু যিনি বাস্তবিকই কোন শক্তিকে তাহাব উপর কাজ করিতে দেন না, বহির্জগৎ র্যাহার উপর কাজ করিলে যিনি স্বর্থীও হন না, দুঃখিতও হন না—সেই ব্যক্তির প্রকৃত লক্ষণ কি ? লক্ষণ এই যে, সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য কিছুই তাহার মনে কোন পরিবর্তন সাধন করিতে পারে না ; সকল অবস্থাতেই তিনি সমভাবে থাকেন। ভারতে ব্যাস-নামক এক মহর্ষি ছিলেন। তিনি বেদান্ত-সুত্রের লেখকরূপে পরিচিত, তিনি খুব ধামিক ছিলেন। ইহার পিতা সিদ্ধ হইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু পারেন নাই ; তাহার পিতামহও চেষ্টা করিয়াছিলেন, তিনিও পারেন নাই ; এইরূপে র্তাহার প্রপিতামহও চেষ্টা করিয়া অকৃতকাষ হন। তিনি নিজে সম্পূর্ণরূপে কৃতকার্য হইতে পারেন নাই, কিন্তু তাহার পুত্র শুকদেব সিদ্ধ হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন। ব্যাস সেই পুত্রকে জ্ঞানের উপদেশ দিতে লাগিলেন । নিজে তত্ত্বজ্ঞান দিয়া তিনি শুকদেবকে জনক-রাজব সভায় প্রেরণ করিলেন। তিনি একজন বড় রাজা ছিলেন এব’ "বিদেহ জনক’ নামে অভিহিত হইতেন ; বিদেহ’ শব্দের অর্থ ‘দেহঙ্কানশূন্থ যদিও তিনি একজন রাজা, তথাপি তিনি দেহবোধ সম্পূর্ণরূপে বিশ্ব’ হইয়াছিলেন। তিনি নিজেকে সর্বদা "আত্মা বলিয়াই অহুভব করিতেন।