পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>\** স্বামীজীর বাণী ও রচনা হয়, তবে সে অপূর্ব সুন্দর চিত্রসমূহ আঁকিতে পরিবে। উত্তম পাচক যে-সকল খাস্তবস্তু লইয়া কাজ করে, তাহতেই সে সম্পূর্ণ মন নিবিষ্ট করে। তখন সাময়িকভাবে তাহার অন্যান্য বোধসকল তিরোহিত হয় । এইরূপেই তাহারা তাহদের অভ্যস্ত কোন কাজ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করিতে সমর্থ হয়। গীতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সমস্ত কর্মই এইরূপে সম্পন্ন হওয়া উচিত। যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্মতা অল্পভব করিয়াছেন, তিনি যোগযুক্ত হইয়া সমস্ত কর্ম করেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ অন্বেষণ করেন না ; এইরূপ কর্মসম্পাদন দ্বারাই জগতের মঙ্গল হয়, ইহা হইতে কোন অমঙ্গল হইতে পারে না। র্যাহার এইভাবে কর্ম করেন, তাহারা নিজের জন্ত কখনও কিছু করেন না। প্রত্যেক কর্মেব ফলই শুভাশুভ-মিশ্রিত । এমন কোন শুভ কর্ম নাই, যাহাতে অণ্ডভের কোন স্পর্শ নাই। অগ্নির চতুর্দিকে যেমন ধূম থাকে, তেমনি কর্মের সহিত কিছু অশুভ সর্বদাই থাকে । ( আমাদের এমন কাজে নিযুক্ত থাকা উচিত, যাহা দ্বারা অধিক পরিমাণে শুভ এবং অল্প পরিমাণে অশুভ হয়) অর্জন ভীষ্ম ও প্রোণকে বধ করিয়াছিলেন। ইহা না করিলে দুৰ্যোধনকে পরাভূত করা সম্ভব হইত না, অশুভ শক্তি শুভ শক্তির উপর প্রাধান্ত লাভ করিত এবং দেশে এক মহা বিপর্যয় অসিত। একদল গৰ্বিত অসৎ নৃপতি বলপূর্বক দেশের শাসনভার অধিকার করিত, এবং প্রজাদের চরম দুর্দশা উপস্থিত হইত। তেমনি শ্ৰীকৃষ্ণ—কংস, জরাসন্ধ প্রভৃতি অত্যাচারী রাজাদের বধ করেন, কিন্তু একটি কাজও তিনি নিজের জন্ত করেন নাই। প্রত্যেকটি কাজই পরের মঙ্গলের জন্য অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। দীপালোকে আমরা গীতা পাঠ করিতেছি, কিন্তু কিছুসংখ্যক পতঙ্গ পুড়িয়া মরিতেছে। এইভাবে বিচার করিলে দেখা যাইবে যে, কর্মের মধ্যে কিছু না কিছু দোষ থাকিবেই। যাহারা কাচা অহং-বোধ বিসর্জন দিয়া কৰ্ম করেন, দোষ তাহাদের স্পর্শ করিতে পারে না, কারণ জগতের হিতের জন্য র্তাহারা কর্ম করেন। নিষ্কাম ও অনাসক্ত হইয়া কৰ্ম করিলে সর্বাধিক আনন্দ ও মুক্তিলাভ হয়। গীতায় শ্ৰীকৃষ্ণ কর্মযোগের এই রহস্ত শিক্ষা দিয়াছেন।