পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ᎧaᏔa স্বামীজীর বাণী ও রচনা দিতে হবে। যখন এই স্বযুম্না-পথ দিয়ে তাদের গতি সহস্রার পর্যন্ত পোঁছবে, তখন কিছুক্ষণের জন্ত আমাদের দেহঙ্কান একেবারে চলে যাবে। মেরুদণ্ডের নিম্নদেশে যে মূলাধার-চক্র আছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানটি হচ্ছে প্রজনন-শক্তিবীজের আধার। একটি ত্রিকোণ-মণ্ডলে একটি ছোট সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে—যোগীরা এই প্রতীকে একে প্রকাশ করেছেন। এই নিত্রিত সর্পই কুওলিনী, এর ঘুম ভাঙানোই হচ্ছে রাজযোগের একটিমাত্র লক্ষ্য। পাশব কার্য থেকে যে যৌনশক্তি উখিত হয়, তাকে উর্ধ্বদিকে মানবশরীরের মহাবিদ্যুদণধার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারলে সেখানে সঞ্চিত হয়ে তা ‘ওজঃ’ বা আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিণত হয়। সকল সৎ চিন্তা, সকল প্রার্থনা ঐ পণ্ডশক্তির কিছুটা ওজঃশক্তিতে পরিণত ক’রে আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি-লাভে সাহায্য করে । এই ‘ওজস্ হচ্ছে মানুষের মন্থন্তত্ব, একমাত্র মকুন্যশরীরেই এই শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব । যার ভেতরে সমগ্র পশিব যৌনশক্তি ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে, তিনি একজন দেবতা । র্তার কথায় অমোঘ শক্তি, তার কথায় জগৎ নবজীবন লাভ করে। যোগীরা মনে মনে কল্পনা করেন যে, এই কুণ্ডলিনী সৰ্প স্বযুম্না-পথে স্তরে স্তরে চক্রের পর চক্র ভেদ ক’রে সহস্রারে উপনীত হয়। মহষ্যশরীরের শ্ৰেষ্ঠ শক্তি যৌন-শক্তি যে পর্যন্ত না ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়, সে পর্যন্ত নারী বা পুরুষ কেউই ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারে না। কোন শক্তিই স্থষ্টি করা যায় না ; তবে তাকে শুধু ঈপ্সিত পথে চালিত করা যেতে পারে। অতএব যে বিরাট শক্তি এখনই আমাদের অধিকারে আছে, তাকে আয়ত্ত করতে শিখে, প্রবল ইচ্ছাশক্তির দ্বারা ঐ শক্তিকে পাশব হতে না দিয়ে আধ্যাত্মিক ক’রে তুলতে হবে। এইভাবে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, পবিত্রতাই সর্বপ্রকার ধর্ম ও নীতির ভিত্তি। বিশেষতঃ রাজযোগে কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণ পবিত্রতা অপরিহার্ধ ; বিবাহিত বা অবিবাহিত—উভয়ের পক্ষে একই নিয়ম। দেহের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বস্তুর যে অপচয় করে, সে কখনও আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারবে না। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, সর্বযুগের বড় বড় সত্যভ্রষ্টা ব্যক্তিগণ হয় সাধু-সন্ন্যাসী, না হয় তারা বিবাহিত জীবন ত্যাগ করেছেন। যাদের জীবন পবিত্র, কেবল তারাই ভগবানের দর্শন পান।