২১২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা যুক্তি দেখাইতে পারি না। এইজন্যই আজকাল ধর্ম ও দর্শনশাস্ত্রের প্রসঙ্গে অশ্রদ্ধা দেখা যায়। প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিই যেন বলিতে চায়, “এই সব ধর্ম তো দেখছি কতকগুলো মত মাত্র, এগুলোর সত্যাসত্য বিচারের কোন মানাও নেই, যার যা খুশি সে তাই প্রচার করতে ব্যস্ত।’ এ-সব সত্ত্বেও ধর্মবিশ্বাসের এক সার্বভৌম মূলভিত্তি আছে—উহাই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মতবাদ ও সর্ববিধ বিভিন্ন ধারণাসমূহের নিয়ামক। ঐগুলির ভিত্তি পর্যন্ত অকুসরণ করিলে আমরা দেখিতে পাই যে, ঐগুলি সর্বজনীন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমতঃ পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন ধর্মগুলি একটু বিশ্লেষণ করিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, উহারা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। কতকগুলির শাস্ত্র বা গ্রন্থ আছে, কতকগুলির তাহা নাই। যেগুলি শাস্ত্রের উপর স্থাপিত, সেগুলি স্বধৃঢ় ; উহাদের অনুগামীর সংখ্যাও অধিক। শাস্ত্র-ভিত্তিহীন ধৰ্মসকল প্রায়ই লুপ্ত, কতকগুলি নূতন হইয়াছে বটে, কিন্তু খুব কম লোকই ঐগুলির অনুগত। তথাপি উক্ত সকল সম্প্রদায়েই মতের এই ঐক্য দেখা যায় যে, উহাদের শিক্ষা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ । খ্ৰীষ্টান তাহার ধর্মে, যীশুখ্রষ্টে ও র্তাহার অবতারত্বে, ঈশ্বর ও আত্মার অস্তিত্বে এবং আত্মার ভবিষ্যৎ উন্নতির সম্ভাবনায় বিশ্বাস করিতে বলিবেন । যদি আমি তাহাকে এই বিশ্বাসের কারণ জিজ্ঞাসা করি, তিনি বলিবেন—‘ইহা আমার বিশ্বাস। কিন্তু যদি তুমি খ্ৰীষ্ট-ধর্মের মূল উৎসে গমন কর, তাহ হইলে দেখিতে পাইবে যে, উহাও প্রত্যক্ষ অনুভূতির উপর স্থাপিত। মীশুখ্ৰীষ্ট বলিয়াছেন, “আমি ঈশ্বর দর্শন করিয়াছি।’ তাহার শিন্যেরাও বলিয়াছিলেন, “আমরা ঈশ্বরকে অনুভব করিয়াছি।’ এইরূপ আরও অনেকের কথা শুন| शृंग्नि । বৌদ্ধধর্মেও এইরূপ ; বুদ্ধদেবের প্রত্যক্ষাস্থভূতির উপর এই ধর্ম স্থাপিত। তিনি কতকগুলি সত্য অনুভব করিয়াছিলেন, সেইগুলি দর্শন করিয়াছিলেন, সেই-সকল সত্যের সংস্পর্শে আসিয়াছিলেন এবং সেগুলিই জগতে প্রচার করিয়াছিলেন। হিন্দুদের সম্বন্ধেও এইরূপ ; তাহদের শাস্ত্রে ঋষি-নামধেয় গ্রন্থকর্তাগণ বলিয়া গিয়াছেন, “আমরা কতকগুলি সত্য অনুভব করিয়াছি।’ র্তাহারা সেগুলিই জগতে প্রচার করিয়া গিয়াছেন। অতএব স্পষ্ট বুঝা গেল