পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তথ্যপঞ্জী 8V9\9 বড় ভেদ নাই, যে রাজা সিংহাসনে বসিয়া রাজ্য পালন করিতেছেন ও যে ঝাড়ুদার রাস্তা বাট দিতেছে—উহাদের উভয়ের কর্ম দ্বারাই মুক্তিলাভ হইতে পারে। তবে ইহার রহস্য হইতেছে—অনাসক্ত হইয়া কর্ম করা । ‘কর্মণোব অধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন” গীতার এই বাক্যই কর্মের রহস্য। ঐ উপদেশ শুধু অর্জুনের জন্ত নয়, সকলের জন্য ; কর্মেই আমাদের অধিকার, ফলে নয়। কিন্তু কি করিয়া এইরূপ অনাসক্ত হওয়া যায়, স্বামীজী তাহার ‘কর্মরহস্য’ ও অস্তান্ত বক্তৃতায় সে বিষয়ে আলোচনা করিয়াছেন। ইহা দুই প্রকারে সম্ভব : (১) ভক্তির আচার্ষের বলিতেছেন—আমাদের শুভাশুভ সকল কর্মই ভগবানে সমর্পণ করিতে হইবে। আমরা যে-কোন কাজ করিতেছি, তাহ। র্তাহার উদ্দেশ্যে যন্ত্রবৎ করিতেছি, বুঝিতে হইবে । ধাত্রী যেমন অপরের সম্ভানকে নিজের সস্তানের মতো পালন করে, কিন্তু অস্তরে ঠিক জানে যে ঐ সস্তান তাহার নয়—আমাদিগকেও সেইভাবে কাজ করিতে হইবে। যাহারা ভক্ত বা ভগবানে বিশ্বাসী তাহাদের পক্ষেই এইভাবে কাজ করা সম্ভব । (২) কিন্তু ষাহারা ভগবানে বিশ্বাসী নয়, তাহার কিরূপে অনাসক্ত হইবে ? এ-কথা স্বামীজী তাহার বক্তৃতাগুলিতে আলোচনা করিয়াছেন। স্বার্থপরতাই সংসার—স্বার্থপরতাই বন্ধনের কারণ। আমরা আমাদের নিজেদের স্বরূপ বুঝিতে পারি না। আমাদের ক্ষুদ্র আমিকেই আমাদের সব বলিয়া মনে করি, ঐ ক্ষুত্র আমিকে ‘বৃহৎ আমিতে পরিণত করিতে হুইবে—বিস্তৃত করিতে হইবে। উহা করিবার উপায়ও স্বামীজী তাহার কর্ম ও চরিত্রের উপর ইহার প্রভাব’ বক্তৃতায় বিশদভাবে বলিয়াছেন। আমাদের সাংসারিক কর্তব্যগুলিও ঐ স্বার্থপরতা কমাইবার জন্ত, ঐ-সকল কর্তব্য করিয়া আমরা কর্তব্যতীত অবস্থায় পৌছিতে পারিব । জ্ঞান ভক্তি বা যোগাদির উদ্দেশুও এই ‘কাচ আমি’কে ‘পাকা অামিতে পরিণত করা। স্বতরাং ইহাদের প্রত্যেকের লক্ষ্যই এক । নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করিতে শিখিলে ‘ৰুদ্ধ ধ্যানের দ্বারা বা খ্ৰীষ্ট প্রার্থনা দ্বারা ষে অবস্থা লাভ করিয়াছেন, মানুষ কর্ম দ্বারাও সেই অবস্থা লাভ করিতে পারে’—ইহাই কর্মরহস্ত । Ֆ-ՏԵ