পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brや3 স্বামীজীর বাণী ও রচনা ইত্যাদির বোঝা আসতে লাগলো। ক্রমে ভিড় হ’তে লাগলো—ছেলে, মেয়ে, বুড়ো—নৌকায় নৌকা। আমার বিলাতী বন্ধু মিঃ গুণমিএর, ব্যারিস্টার হয়ে মান্দ্রাজে এসেছেন, তাকেও দেখতে পেলেম । রামকৃষ্ণানন্দ আর নির্ভয় ১ বারকতক আনাগোন করলে । তারা সারাদিন সেই রৌদ্রে নৌকায় থাকবে —শেষে ধমকাতে তবে ষায় । ক্রমে যত খবর হ’ল যে আমাকে নাবতে হুকুম দেবে না, তত নৌকার ভিড় আরও বাড়তে লাগলো। শরীরও ক্রমাগত জাহাজের বারাণ্ডায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অবসন্ন হয়ে আসতে লাগলে । তখন মান্দ্রাজী বন্ধুদের কাছে বিদায় চাইলাম, ক্যাবিনের মধ্যে প্রবেশ করলাম। আলাসিঙ্গ ‘ব্রহ্মবাদিন ও মান্দ্রাজী কাজকর্ম সম্বন্ধে পরামর্শ করবার অবসর পায় না ; কাজেই সে কলম্বো পর্যন্ত জাহাজে চলল। সন্ধ্যার সময় জাহাজ ছাড়লে । তখন একটা রোল উঠল। জানল দিয়ে উকি মেরে দেখি, হাজারখানেক মান্দ্রাজী স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকা বন্দরের বাধের উপর বসেছিল--জাহাজ ছাড়তেই, তাদের এই বিদায়-স্বচক রব! মান্দ্রাজীর আনন্দ হ’লে বঙ্গদেশের মত হুলু দেয় । t মান্দ্রাজ হ’তে কলম্বো চার দিন । যে তরঙ্গভঙ্গ গঙ্গাসাগর থেকে আরম্ভ হয়েছিল, তা ক্রমে বাড়তে লাগলো। মান্দ্রাজের পর আরও বেড়ে গেল। জাহাজ বেজায় দুলতে লাগলো। যাত্রীরা মাথা ধরে ন্যাকার ক’রে অস্থির । বাঙালীর ছেলে দুটিও ভারি সিক। একটি তো ঠাউরেছে মরে যাবে , তাকে অনেক বুঝিয়ে মুঝিয়ে দেওয়া গেল যে কিছু ভয় নেই, অমন সকলেরই হয়, ওতে কেউ মরেও না, কিছুই না । সেকেণ্ড কেলাসটা আবার ‘স্কুর’ ঠিক উপরে। ছেলে-ফুটিকে কালা আদমী বলে, একটা অন্ধকূপের মতো ঘর ছিল, তারই মধ্যে পুরেছে। সেখানে পবনদেবেরও যাবার হুকুম নাই, স্বর্ষেরও প্রবেশ নিষেধ । ছেলে-দুটির ঘরের মধ্যে যাবার জো নাই ; আর ছাতের উপর—সে কি দোল । আবার যখন জাহাজের সামনেট একটা ঢেউয়ের গহবরে বসে যাচ্চে, আর পেছনটা উচু হয়ে উঠছে, তখন দুটা জল ছাড়া হয়ে শূন্যে ঘুরছে, আর সমস্ত জাহাজটা ঢক. ঢক ঢক ঢক ক’রে নড়ে উঠছে। সেকেণ্ড কেলাসটা ঐ সময় যেমন বেরালে ইছর ধরে এক একবার ঝাড়া দেয়, তেমনি ক’রে নড়ছে। ১ স্বামীজীর অন্ততম শিক্স স্বামী নিৰ্ভয়ানন্দ ।