পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ q & স্বামীজীর বাণী ও রচনা এদিকে পোতুগিজরা ভারতের নূতন পথ—আফ্রিকা বেড়ে আবিষ্কার করলে। ভারতের লক্ষ্মী পোতুর্গালের উপর সদয় হলেন ; পরে ফরাসী, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ । ইংরেজের ঘরে ভারতের বাণিজ্য, রাজস্ব— সমস্তই ; তাই ইংরেজ এখন সকলের উপর বড় জাত। তবে এখন আমেরিকা প্রভৃতি দেশে ভারতের জিনিসপত্র অনেক স্থলে ভারত অপেক্ষাও উত্তম উৎপন্ন হচ্চে, তাই ভারতের আর তত কদর নাই। এ কথা ইউরোপীয়ের স্বীকার করতে চায় না ; ভারত-নেটিভপূর্ণ, ভারত যে তাদের ধন, সভ্যতার প্রধান সহায় ও সম্বল, সে কথা মানতে চায় না, বুঝতেও চায় না। আমরাও বোঝাতে কি ছাড়বো ? ভেবে দেখ–কথাটা কি। ঐ যার চাষাভূষা তাতি-জোলা ভারতের নগণ্য মনুষ্য—বিজাতিবিজিত স্বজাতিনিন্দিত ছোট জাত, তারাই আবহমানকাল নীরবে কাজ ক’রে যাচ্চে, তাদের পরিশ্রমফলও তারা পাচ্চে না ! কিন্তু ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক নিয়মে দুনিয়াময় কত পরিবর্তন হয়ে যাচ্চে । দেশ, সভ্যতা, প্রাধান্ত ওলটপালট হয়ে যাচ্চে । হে ভারতের শ্রমজীবি ! তোমরা নীরব অনবরত-নিন্দিত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বাবিল, ইরান, আলেকসন্দ্রিয়া, গ্রীস, রোম, ভিনিস, জেনোয়া, বোগদাদ, সমরকন্দ, স্পেন, পোতুগাল, ফরাসী, দিনেমার, ওলন্দাজ ও ইংরেজের ক্রমান্বয়ে আধিপত্য ও ঐশ্বর্য । আর তুমি ?—কে ভাবে এ কথা । স্বামীজী ! তোমাদের পিতৃপুরুষ দুখানা দর্শন লিখেছেন, দশখানা কাব্য বানিয়েছেন, দশটা মন্দির করেছেন—তোমাদের ডাকের চোটে গগন ফাটছে ; আর যাদের রুধিরত্রাবে মনুষ্যজাতির যা কিছু উন্নতি –তাদের গুণগান কে করে ? লোকজয়ী ধর্মবীর রণবীর কাব্যবীর সকলের চোখের উপর, সকলের পূজ্য ; কিন্তু কেউ যেখানে দেখে না, কেউ যেখানে একটা বাহবা দেয় না, যেখানে সকলে ঘৃণা করে, সেখানে বাস করে অপার সহিষ্ণুতা, অনন্ত প্রতি ও নির্ভীক কার্যকারিতা ; আমাদের গরীবরা ঘরদুয়ারে দিনরাত যে মুখ বুজে কর্তব্য ক’রে যাচ্চে, তাতে কি বীরত্ব নাই ? বড় কাজ হাতে এলে অনেকেই বীর হয়, দশ হাজার লোকের বাহবার সামনে কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও নিষ্কাম হয় ; কিন্তু অতি ক্ষুদ্র কার্যে সকলের অজান্তেও যিনি সেই নিঃস্বার্থতা, কর্তব্যপরায়ণতা দেখান, তিনিই ধন্য—সে তোমরা ভারতের চিরপদদলিত শ্রমজীবি ! —তোমাদের প্রণাম করি ।