পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য Տ Պծ ছেলেপিলেগুলো নড়ে-ভোলা পেটমোটা আসল জানোয়ার হবে না তো কি ? এত বড় ষণ্ড জাত ইংরেজ, এরা ভাজ্যভুজি মেঠাইমণ্ডার নামে ভয় খায়, যাদের বরফান দেশে বাস, দিনরাত কসরত ! আর আমাদের অগ্নিকুণ্ডে বাস, এক ঘর থেকে আর এক ঘরে নড়ে বসতে চাইনি, আর আহার লুচি কচুরি মেঠাই—ঘিয়েভাজা, তেলেভাজা ! সেকেলে পাড়াগেয়ে জমিদার এক কথায় দশ ক্রোশ হেঁটে দিত, দুকুড়ি কই মাছ কাটামৃদ্ধ চিবিয়ে ছাড়ত, ১০০ বৎসর বঁচিত। তাদের ছেলেপিলেগুলো কলকেতায় আসে, চশমা চোখে দেয়, লুচি কচুরি খায়, দিনরাত গাড়ী চড়ে, আর প্রস্রাবের ব্যামে হয়ে মরে ; “কলকোত্তা’ই হওয়ার এই ফল !! আর সর্বনাশ করেছে ঐ পোড়া ডাক্তার-বন্দিগুলো । ওরা সবজাস্তা, ওষুধের জোরে ওরা সব করতে পারে। একটু পেট গরম হয়েছে তো আমনি একটু ওষুধ দাও ; পোড়া বদিও বলে না যে, দূর কর ওষুধ, যা, দুক্রোশ হেঁটে আসগে যা। নানান দেশ দেখছি, নানান রকমের খাওয়াও দেখছি। তবে আমাদের ভাত-ডাল ঝোলচচ্চড়ি শুক্তে মোচার ঘূণ্টের জন্য পুনর্জন্ম নেওয়াও বড় বেশী কথা মনে হয় না। দাত থাকতে তোমরা যে দাতের মর্যাদা বুঝছ না, এই আপসোস । খাবার নকল কি ইংরেজের করতে হবে—সে টাকা কোথায় ? এখন আমাদের দেশের উপযোগী যথার্থ বাঙালী খাওয়া, উপাদেয় পুষ্টিকর ও সস্তা খাওয়া পূর্ব-বাঙলায়, ওদের নকল কর যত পারো। যত পশ্চিমের দিকে ঝুঁকবে, ততই খারাপ ; শেষ কলাইয়ের ডাল আর মাছের টক মাত্র-আধা-সাঁওতালী বীরভূম বঁাকড়োয় দাড়াবে! তোমরা কলকেতার লোক, ঐ যে এক সর্বনেশে ময়দার তালে হাতে-মাটি দেওয়া ময়রার দোকানরূপ সর্বনেশে ফাদ খুলে বসেছে, ওর মোহিনীতে বীরভূম বঁাকড়ো ধামাপ্রমাণ মুড়ি দামোদরে ফেলে দিয়েছে, কলায়ের ডাল গেছেন খানায়, আর পোস্তবাটা দেয়ালে লেপ দিয়েছে, ঢাকা বিক্রমপুরও টাইমাছ কচ্ছপাদি জলে ছেড়ে দিয়ে সইভ্য’ হচ্ছে! নিজের তো উচ্ছন্ন গেছ, আবার দেশস্কন্ধকে দিচ্ছ, এইতোমরা বড় সভ্য, শহুরে লোক! তোমাদের মুখে ছাই! ওরাও এমনি আহাম্মক যে, ঐ কলকেতার আবর্জমাগুলো খেয়ে উদরাময় হয়ে মর-মর হবে, তবু বলবে না যে, এগুলো হজম হুচ্ছে না, বলবে—নোনা লেগেছে! কোন রকম ক’রে । শহুরে হবে! -