পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ ৯২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা রূপ—একটু স্বচ্ছবি দেখবার চেষ্টা এবং সফলও হয়েছে। এই ফ্রাস প্রাচীনকাল হ’তে গোলওয়া ( Gauls ), রোমক, ফ্রা (Franks ) প্রভৃতি জাতির সংঘর্ষভূমি ; এই ফ্রণ জাতি রোমসাম্রাজ্যের বিনাশের পর ইউরোপে একাধিপত্য লাভ করলে, এদের বাদশা শার্লামাঞন (Charlemagne ) ইউরোপে ক্রিশচান ধর্ম তলওয়ারের দাপটে চালিয়ে দিলেন, এই ফ্রী জাতি হতেই আশিয়াখণ্ডে ইউরোপের প্রচার, তাই আজও ইউরোপী আমাদের কাছে ফ্রাকি, ফেরিঙ্গি, প্লাকি, ফিলিঙ্গ ইত্যাদি । সভ্যতার আকর প্রাচীন গ্রীস ডুবে গেল। রাজচক্রবর্তী রোম বর্বর ( Barbars ) আক্রমণ-তরঙ্গে তলিয়ে গেল। ইউরোপের আলো নিবে গেল, এদিকে আর এক অতি বর্বরজাতির আশিয়াখণ্ডে প্রাদুর্ভাব হ’ল— আরবজাতি। মহাবেগে সে আরব-তরঙ্গ পৃথিবী ছাইতে লাগলো। মহাবল পারস্য আরবের পদানত হ’ল, মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করতে হ’ল, কিন্তু তার ফলে মুসলমান ধর্ম অার এক রূপ ধারণ করলে ; সে আরবি ধর্ম আর পারসিক সভ্যতা সম্মিলিত হ’ল । আরবের তলওয়ারের সঙ্গে সঙ্গে পারস্য সভ্যতা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ষে পারস্য সভ্যতা প্রাচীন গ্রীস ও ভারতবর্ষ হ’তে নেওয়া । পূর্ব পশ্চিম দুদিক হতে মহাবলে মুসলমান তরঙ্গ ইউরোপের উপর আঘাত করলে, সঙ্গে সঙ্গে বর্বর অন্ধ ইউরোপে জ্ঞানালোক ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। প্রাচীন গ্রীকদের বিদ্যা বুদ্ধি শিল্প বর্বরাক্রান্ত ইতালিতে প্রবেশ করলে, ধরা-রাজধানী রোমের মৃত শরীরে প্রাণম্পন্দন হ’তে লাগলো—সে স্পন্দন ফ্লরেন্স নগরীতে প্রবল রূপ ধারণ করলে, প্রাচীন ইতালি নবজীবনে বেঁচে উঠতে লাগলো, এর নাম রেনেসঁা ( Renaissance )—নবজন্ম । কিন্তু সে নবজন্ম হ’ল ইতালির । ইউরোপের অন্যান্য অংশের তখন প্রথম জন্ম । সে ক্রিশ্চনী ষোড়শ শতাব্দীতে—যখন আকবর, জাহাগির, শাজাহঁ। প্রভৃতি মোগল সম্রাট ভারতে মহাবল সাম্রাজ্য তুলেছেন, সেই সময় ইউরোপের জন্ম হ’ল। ইতালি বুড়ো জাত, একবার সাড়াশব্দ দিয়ে আবার পাশ ফিরে শুলো । সে সময় নানা কারণে ভারতবর্ষও জেগে উঠেছিল কিছু, আকবর হতে তিন পুরুষের রাজত্বে বিদ্যা বুদ্ধি শিল্পের আদর যথেষ্ট হয়েছিল, কিন্তু অতি বৃদ্ধ জাত নানা কারণে আবার পাশ ফিরে গুলো ।