পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉。8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা বা শিল্পে হোক, বা সমাজনীতিতেই হোক। এই ফরাসী সভ্যতা স্কটল্যাণ্ডে লাগলো, স্কটরাজ ইংলণ্ডের রাজা হলেন, ফরাসী সভ্যতা ইংলণ্ডকে জুগিয়ে তুললে ; স্কটরাজ স্টয়ার্ট বংশের সময় ইংলণ্ডে রয়াল সোসাইটি প্রভৃতির স্বষ্টি । আর এই ফ্রাস স্বাধীনতার আবাস, প্রজাশক্তি মহাবেগে এই পারি নগরী হতে ইউরোপ তোলপাড় ক’রে ফেলেছে, সেই দিন হ’তে ইউরোপের নূতন মূর্তি হয়েছে। সে এগালিতে, লিবার্তে, ফ্রাতের্নিতের (Egalite', Liberte, Fratern ite — সাম্য, স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব ) ধ্বনি ফ্রাস হ’তে চলে গেছে ; ফ্রাস অন্য ভাব, অন্য উদ্দেশ্য অনুসরণ করছে, কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য জাত এখনও সেই ফরাসী বিপ্লব মকৃশ করছে । একজন স্কটল্যাণ্ড দেশের প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক পণ্ডিত আমায় সেদিন বললেন যে, পারি হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্র ; যে দেশ ষে পরিমাণে এই পারি নগরীর সঙ্গে নিজেদের যোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবে, সে জগত তত পরিমাণে উন্নতি লাভ করবে। কথাটা কিছু অতিরঞ্জিত সত্য ; কিন্তু এ কথাটাও সত্য যে, যদি কারু কোন নূতন ভাব এ জগৎকে দেবার থাকে তো এই পারি হচ্ছে সে প্রচারের স্থান । এই পারিতে যদি ধ্বনি ওঠে তো ইউরোপ অবশ্যই প্রতিধ্বনি করবে। ভাস্কর, চিত্রকর, গাইয়ে, নর্তকী—এই মহানগরীতে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারলে আর সব দেশে সহজেই প্রতিষ্ঠা হয় । আমাদের দেশে এই পারি নগরীর বদনামই শুনতে পাওয়া যায়, এ পারি মহাকদর্য বেশ্বাপূর্ণ নরককুণ্ড । অবশ্য এ কথা ইংরেজরাই বলে থাকে, এবং অন্য দেশের যে সব লোকের পয়সা আছে এবং জিহোপস্থ ছাড়া দ্বিতীয় ভোগ জীবনে অসম্ভব, তারা অবশ্ব বিলাসময় জিহোপস্থের উপকরণময় পারিই দেখে! কিন্তু লগুন, বার্লিন, ভিয়েন, নিউইয়র্কও ঐ বারবনিতাপূর্ণ, ভোগের উদ্যোগপূর্ণ ; তবে তফাত এই যে, অন্য দেশের ইন্দ্রিয়চর্চা পশুবৎ, প্যারিসের— সভ্য পারির ময়লা সোনার পাতমোড়া ; বুনো শোরের পাকে লোটা, আর ময়ূরের পেখমধরা নাচে যে তফাত, অন্যান্য শহরের পৈশাচিক ভোগ আর এ প্যারিস-বিলাসের সেই তফাত । ভোগ-বিলাসের ইচ্ছা কোন জাতে নেই বলে ? নইলে দুনিয়ায় যার দু পয়সা হয়, সে অমনি পারি-নগরী অভিমুখে ছোটে কেন ? রাজা-বাদশার চুপিসাড়ে নাম ভাড়িয়ে এ বিলাস-বিবর্তে স্নান ক'রে পবিত্র হতে আসেন