পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* о о স্বামীজীর বাণী ও রচনা জ্ঞান মানে কি না, বহুর মধ্যে এক দেখা । যেগুলো আলাদা, তফাত ব’লে আপাততঃ বোধ হচ্ছে, তাদের মধ্যে ঐক্য দেখা। যে সম্বন্ধে এই ঐক্য মানুষ দেখতে পায়, সেই সম্বন্ধটাকে ‘নিয়ম’ বলে ; এরই নাম প্রাকৃতিক নিয়ম | পূর্বে বলেছি যে, আমাদের বিদ্যা বুদ্ধি চিন্তা সমস্ত আধ্যাত্মিক, সমস্ত বিকাশ ধর্মে । আর পাশ্চাত্যে ঐ সমস্ত বিকাশ বাইরে, শরীরে, সমাজে । ভারতবর্ষে চিন্তাশীল মনীষীরা ক্রমে বুঝতে পারলেন যে, ও আলাদা ভাবটা ভুল ; ও-সব আলাদার মধ্যে সম্বন্ধ রয়েছে ; মাটি, পাথর, গাছপালা, জন্তু, মাতুষ, দেবতা, এমন কি ঈশ্বর স্বয়ং–এর মধ্যে ঐক্য রয়েছে। অদ্বৈতবাদী এর চরম সীমায় পৌছুলেন, বললেন যে সমস্তই সেই একের বিকাশ । বাস্তবিক এই অধ্যাত্ম ও অধিভূত জগৎ এক, তার নাম ‘ব্ৰহ্ম’ আর ঐ যে আলাদা আলাদা বোধ হচ্ছে, ওটা ভুল, ওর নাম দিলেন ‘মায়া’, ‘অবিদ্যা’ অর্থাৎ অজ্ঞান । এই হ’ল জ্ঞানের চরম সীমা । ভারতবর্ষের কথা ছেড়ে দাও, বিদেশে যদি এ কথাটা এখন কেউ বুঝতে না পারে তো তাকে আর পণ্ডিত কি ক’রে বলি । মোদা, এদের অধিকাংশ পণ্ডিতই এটা এখন বুঝেছে, এদের রকম দিয়ে—জড় বিজ্ঞানের ভেতর দিয়ে। তা সে এক কেমন ক’রে বিহু’ হ’ল, এ কথা আমরাও বুঝি না, এরাও বোঝে না। আমরাও সিদ্ধাস্ত ক’রে দিয়েছি যে ওখানটা বুদ্ধির অতীত, এরাও তাই করেছে। তবে সে “এক কি কি রকম হয়েছে, কি কি রকম জাতিত্ব ব্যক্তিত্ব পাচ্ছে, এটা বোঝা যায় এবং এটার খোজের নাম বিজ্ঞান (Science). সমাজের ক্রমবিকাশ কাজেই এখন এদেশে প্রায় সকলেই পরিণামবাদী—Evolutionist, যেমন ছোট জনোয়ার বদলে বদলে বড় জানোয়ার হচ্ছে, বড় জানোয়ার কখন কখন ছোট হচ্ছে, লোপ পাচ্ছে ; তেমনি মাহ্য যে একটা স্বসভ্য অবস্থায় দুম ক’রে জন্ম পেলে, এ কথা আর কেউ বড় বিশ্বাস করছে না । বিশেষ এদের বাপ-দাদা কাল না পরশু বর্বর ছিল, তা থেকে অল্প দিনে এই কাও । কাজেই এরা বলছে যে, সমস্ত মানুষ ক্রমে ক্রমে অসভ্য অবস্থা থেকে উঠেছে এবং উঠছে।