পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ૨ ૦ છે আদিম মানুষ কাঠ-পাথরের যন্ত্রতন্ত্র দিয়ে কাজ চালাত, চামড়া বা পাত প’রে দিন কাটাত, পাহাড়ের গুহায় বা পার্থীর বাসার মতে কুঁড়ে ঘরে গুজরান করত । এর নিদর্শন সর্বদেশের মাটির নীচে পাওয়া যাচ্ছে এবং কোন কোন স্থলে সে অবস্থার মানুষ স্বয়ং বর্তমান। ক্রমে মানুষ ধাতু ব্যবহার করতে শিখলে, সে নরম ধাতু—টিন আর তাম। তাকে মিশিয়ে যন্ত্রতন্ত্র অস্ত্রশস্ত্র করতে শিখলে। প্রাচীন গ্রীক, বাবিল, মিসরীরাও অনেকদিন পর্যন্ত লোহার ব্যবহার জানত না—যখন তারা অপেক্ষাকৃত সভ্য হয়েছিল, বই পত্র পর্যন্ত লিখত, সোনা রূপে ব্যবহার করত, তখন পর্যন্ত । আমেরিকা মহাদ্বীপের আদিম নিবাসীদের মধ্যে মেক্সিকে পেরু মায়া প্রভৃতি জাতি অপেক্ষাকৃত সুসভ্য ছিল, প্রকাণ্ড প্রকাগু মন্দির নির্মাণ ক’রত, সোনা রূপোর খুব ব্যবহার ছিল ( এমন কি ঐ সোনা রূপোর লোভেই স্পানি লোকেরা তাদের ধ্বংস সাধন করলে ) । কিন্তু সে সমস্ত কাজ চকমকি পাথরের অস্ত্রদ্বারা অনেক পরিশ্রমে ক’রত, লোহার নাম-গন্ধও জানত না । আদিম অবস্থায় মানুষ তীর ধনুক বা জালাদি উপায়ে জন্তু জানোয়ার মাছ মেরে খেত, ক্রমে চাষবাস শিখলে, পশুপালন করতে শিখলে । বনের জানোয়ারকে বশে এনে নিজের কাজ করতে লাগলো। অথবা সময়মত আহারেরও জন্য জানোয়ার পালতে লাগলো। গরু, ঘোড়া, শূকর, হাতি, উট, ভেড়া, ছাগল, মুরগী প্রভৃতি পশু-পক্ষী মাহুষের গৃহপালিত হতে লাগলো! এর মধ্যে কুকুর হচ্ছেন মানুষের আদিম বন্ধু । আবার চাষবাস আরম্ভ হ’ল। যে ফল-মূল শাক-সবজি ধান-চাল মানুষে খায়, তার বুনো অবস্থা আর এক রকম। এ মানুধের যত্নে বুনো ফল বুনো ঘাস নানাপ্রকার স্বখাদ্য বৃহৎ ও উপাদেয় ফলে পরিণত হ’ল। প্রকৃতিতে আপন আপনি দিনরাত অদল-বদল তো হচ্ছেই। নানাজাতের বৃক্ষলতা পশুপক্ষী শরীরসংসর্গে দেশ-কাল-পরিবর্তনে নবীন নবীন জাতির হট্টি হচ্ছে । কিন্তু মানুষ-স্থষ্টির পূর্ব পর্যন্ত প্রকৃতি ধীরে ধীরে তরুলতা, জীবজন্তু বানাচ্ছিলেন, মানুষ জন্মে অবধি সে হুড়মুড় ক’রে বদলে দিতে লাগলো। সঁ সঁ ক’রে এক দেশের গাছপালা জীবজন্তু অন্য দেশে মানুষ নিয়ে যেতে লাগলো, তাদের পরম্পর মিশ্রণে নানাপ্রকার অভিনব জীবজন্তুর, গাছপালার জাত মানুষের, স্বারা স্বল্প হ’তে লাগলো -