পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা স্বামী বিবেকানন্দের সর্বতোমুখী প্রতিভা-প্রস্থত বর্তমান ভারত বঙ্গসাহিত্যে এক অমূল্য রত্ব। তমসাচ্ছন্ন ভারতেতিহাসে একটা পূর্বাপর সম্বন্ধ দেখা অতি কম লোকের ভাগ্যেই ঘটে। স্থলদৃষ্টি সাধারণ পাঠক ইহাতে দুইচারিটি ধর্মবীর বা কৰ্মবীরের মূর্তি এবং দুই-একটি ধর্মবিপ্লব বা রাজ্যবিপ্লব অতি অসম্বদ্ধভাবে গ্রথিত ভিন্ন আর কিছুই দেখেন না । গবেষণাশীল যশোলিপা, পাশ্চাত্য পণ্ডিতকুলের স্বক্ষ দৃষ্টিও প্রাচ্য জাতিসমূহের মানসিক গঠন, আচার-ব্যবহার, কার্যপ্রণালী প্রভৃতির দ্বারা প্রতিহত হইয়া এখানে অনেক সময়ে সরল পথ ত্যাগ করে এবং কুজুটিকাবৃত কিম্ভূতকিমাকার মূর্তিসকলই দেখিয়া থাকে। বিশেষতঃ যে শক্তি ভারতের অস্থিমজ্জায় প্রবিষ্ট, যাহার খেলা বৈদিক অধিকার হইতে বৌদ্ধাধিকার পর্যস্ত সর্বপ্রকার উচ্চভাবসমুদ্বয়ের সমাবেশ করিয়া ভারতকে জগতের শিরোভূষণ করিয়াছিল, যাহার হীনতায় পুনরায় মুসলমান প্রভৃতি বিজাতীয় রাজগণের ভারতে প্রবেশ, সেই ধর্মশক্তি পাশ্চাত্য পণ্ডিতকুলের দৃষ্টিতে ছায়াময় অবাস্তব মূর্তিবিশেষরূপে প্রকাশিত, সুতরাং উহা দ্বারা যে জাতীয় উন্নতি এবং অবনতির সমাধান হইতে পারে, ইহা তাহদের বুদ্ধির সম্পূর্ণ অগোচর। ব্যক্তিগত ভাবসমূহই সমষ্টিরূপে সমাজগত হইয়া জাতিবিশেষের জাতীয়ত্ব সম্পাদন করে । এই জাতীয়ত্বভাব ভিন্ন ভিন্ন জাতির পরস্পর বিভিন্ন বলিয়াই এক জাতির পক্ষে অপর জাতির ভাব বুঝা দুষ্কর হইয়া উঠে এবং সেইজন্য ভারতেতিহাস সম্বদ্ধভাবে বুঝিতে যাইয়া পাশ্চাত্য পণ্ডিতকুল অনেক সময়ে বিফলমনোরথ হন। আমাদের ধারণা, ভারতে ইতিহাসের যে অভাব তাহা নহে, কিন্তু উহার সম্বদ্ধ সংযোজনে ভারতসন্তানই একমাত্র সমর্থ এবং উহার যথার্থ পাঠক্রম তাহদের দ্বারাই একদিন না একদিন আবিষ্কৃত হইবে। বহুল পরিভ্রমণ, গর্বিত রাজকুল হইতে দরিদ্র প্রজা পর্যস্ত সকলের সহিত সমভাবে মিলন, ভারত ও ভারতেতর দেশের আচার-ব্যবহার এবং জাতীয়ত্বভাব সমূহের নিরপেক্ষ দর্শন, অশেষ অধ্যয়ন এবং স্বদেশবাসীর প্রতি অপার প্রেম ও তাহদের দুঃখে গভীর সহাহভূতির ফলে স্বামীজীর মনে ভারতের যে চিত্র অঙ্কিত হইয়াছিল, ‘বর্তমান ভারত’ তাহারই নিদর্শনস্বরূপ ।