পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ ૦ স্বামীজীর বাণী ও রচনা ভারতেতিহাসের জটিল প্রশ্নসমূহের সমাধানে তিনি কতদূর কৃতকার্য হইয়াছেন, সে বিষয়ে আমাদের বলিবার কিছুই নাই ; পাঠকদের ক্ষমতা থাকে তো বিচার করিয়া দেখুন। তবে স্বামীজীর ন্যায় অসামান্ত জীবন এবং প্রতিভোৎপন্ন মীমাংসা যে চিন্তা ও পাঠের যোগ্য, সে বিষয়ে কে সন্দিহান হইতে পারে ? বর্তমান ভারত’ প্রথমে প্রবন্ধকারে পাক্ষিক পত্র ‘উদ্বোধনে প্রকাশিত হয়। অনেকের মুখে ঐ সময় শুনিয়াছিলাম যে, উহার ভাষা অতি জটিল ও দুর্বোধ্য। এখনও হয়তো অনেকে ঐ কথা বলিবেন, কিন্তু অদ্য আমরা সেই মতের পক্ষাবলম্বন করিয়া ভাষার দোষ স্বীকারপূর্বক বর্তমান ভারত উপহারহস্তে সলজ্জভাবে পাঠক-সমীপে সমাগত নহি । আমরা উহাতে ভাব ও ভাষার অদ্ভুত সামঞ্জস্য দেখিয়া মোহিত হইয়াছি। বঙ্গভাষা যে অত অল্পায়তনে অত অধিক ভাবরাশি প্রকাশে সমর্থ, ইহা আমরা পূর্বে অণর কোথাও দেখি নাই। পদলালিত্যও অনেক স্থানে বিশেষ বিকশিত । অনাবশ্বকীয় শব্দনিচয়ের এতই অভাব যে, বোধ হয় যেন লেখক প্রত্যেক শব্দের ভাব পরিমাণ করিয়া আবশ্বকমত প্রয়োগ করিয়াছেন। অধিকন্তু ইহা একখানি দর্শনগ্রস্থ । ভারতসমাগত যাবতীয় জাতির মানসিক ভাবরাশি-সমুদ্ভূত দ্বন্দ্ব দশসহস্রবর্ষব্যাপী কাল ধরিয়া উহাদিগকে পরিচালিত এবং ধীরে ধীরে শ্রেণীবদ্ধ, উন্নত, অবনত ও পরিবর্তিত করিয়া দেশে সুখ-দুঃখের পরিমাণ কিরূপে কখন হ্রাস, কথন বা বৃদ্ধি করিয়াছে এবং বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণ, বিভিন্ন আচার ব্যবহার, কার্যপ্রণালীর মধ্যেও এই আপাত-অসম্বদ্ধ ভারতীয় জাতিসমূহ কোন স্থত্রেই বা আবদ্ধ হইয়া আপনাদিগকে হিন্দু বলিয়া সমভাবে পরিচয় দিতেছে এবং কোন দিকেই বা ইহাদের ভবিষ্যৎ গতি, সেই গুরুতর দার্শনিক বিষয়ই ‘বর্তমান ভারতের’ আলোচ্য বিষয়। ইহার ভাষা কেমন করিয়া আদি বা করুণরস-সংঘটিত নভেল-নাটকাদির তুল্য হইবে, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। দুর্ভাগ্যক্রমে এদেশে এখন যথার্থ রসজ্ঞ লোকের একান্ত অভাব। গভীর-চিন্তাপ্রস্থত বিজ্ঞানেতিহাসদশনাদির অথবা আদি ও করুণ ভিন্ন বীর-রসাদির লেখক ও পাঠক অতীব বিরল। সাধারণ লোকের তো কথাই নাই, তাহদের রুচি মার্জিত এবং বিশুদ্ধ হইয়া চিন্তাশীল লোকের সম্মানাহঁ হওয়া এখনও অনেক