পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*RVలి: স্বামীজীর বাণী ও রচনা যথেষ্ট সময় দেয়, কাজেই পুরোহিত চিন্তাশীল হয়েন এবং তজ্জন্যই পুরোহিতপ্রাধান্তে প্রথম বিদ্যার উন্মেষ । তুর্ধর্ষ ক্ষত্ৰিয়-সিংহের এবং ভয়কম্পিত-প্রজাঅজাযুথের মধ্যে পুরোহিত দণ্ডায়মান। সিংহের সর্বনাশেছ পুরোহিতহস্তধৃত অধ্যাত্মরূপ কশার তাড়নে নিয়মিত। ধনজনমদোন্মত্ত ভূপালবৃন্দের যথেচ্ছাচাররূপ অগ্নিশিখা সকলকেই ভস্ম করিতে সক্ষম, কেবল ধনজনহীন দরিদ্র তপোবলসহায় পুরোহিতের বাণীরূপ জলে সে অগ্নি নির্বাপিত। পুরোহিতপ্রাধান্তে সভ্যতার প্রথম আবির্ভাব, পশুত্বের উপর দেবত্বের প্রথম বিজয়, জড়ের উপর চেতনের প্রথম অধিকার-বিস্তার, প্রকৃতির ক্রীতদাস জড়পিগুবং মহুযুদেহের মধ্যে অস্ফুটভাবে যে অধীশ্বরত্ব লুক্কায়িত, তাহার প্রথম বিকাশ । পুরোহিত জড়-চৈতন্তের প্রথম বিভাজক, ইহ-পরলোকের সংযোগ-সহায়, দেবমহস্যের বার্তাবহ, রাজা-প্রজার মধ্যবর্তী সেতু। বহুকল্যাণের প্রথমাস্কুর তাহারই তপোবলে, তাহারই বিদ্যানিষ্ঠায়, তাহারই ত্যাগমন্ত্রে, তাহারই প্রাণসিঞ্চনে সমূদ্ভূত ; এজন্যই সর্বদেশে প্রথম পূজা তিনিই পাইয়াছিলেন, এজন্যই র্তাহীদের স্মৃতিও আমাদের পক্ষে পবিত্র । দোষও আছে ; প্রাণ-স্কৃতির সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুবীজ উপ্ত। অন্ধকার আলোর সঙ্গে সঙ্গে চলে। প্রবল দোষও আছে, যাহা কালে সংযত না হইলে সমাজের বিনাশসাধন করে । স্থলের মধ্য দিয়া শক্তির বিকাশ সর্বজনীন প্রত্যক্ষ, অস্ত্রশস্ত্রের ছেদ-ভেদ, অগ্ন্যাদির দাহিকাদি শক্তি, স্থল প্রকৃতির প্রবল সংঘর্ষ সকলেই দেখে, সকলেই বুঝে । ইহাতে কাহারও সন্দেহ হয় না, মনেও দ্বিধা থাকে না । কিন্তু যেখানে শক্তির আধার ও বিকাশকেন্দ্র কেবল মানসিক, যেখানে বল কেবল শব্দবিশেষে, উচ্চারণবিশেষে, জপবিশেষে বা অন্যান্য মানসিক প্রয়োগবিশেষে, সেথায় আলোয় আঁধার মিশিয়া আছে ; বিশ্বাসে সেথায় জোয়ার-ভাটা স্বাভাবিক, প্রত্যক্ষেও সেথায় কখন কখন সন্দেহ হয়। যেথায় রোগ, শোক, ভয়, তাপ, ঈর্ষা, বৈরনির্যাতন—সমস্তই উপস্থিত বাহুবল ছাড়িয়া, স্কুল উপায় ছাড়িয়া ইষ্টসিদ্ধির জন্য কেবল স্তম্ভন, উচ্চাটন, বশীকরণ, মারণাদির আশ্রয় গ্রহণ করে, স্কুল স্থক্ষ্মের মধ্যবর্তী এই কুঙ্কটিকাময় প্রহেলিকাময় জগতে যাহারা নিয়ত বাস করেন, তাহাদের মধ্যেও যেন একটা ঐ প্রকার ধূম্রময়ভােব আপনা আপনি প্রবিষ্ট হয়! সে মনের সম্মুখে সরল রেখা প্রায়ই পড়ে না, পড়িলেও মন তাহাকে বক্র করিয়া লয়।