পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર૭8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা আর পুরোহিতের পৌরোহিত্য থাকে না। যাহার এ কঠোর বন্ধনের মধ্যে স্বাভাবিক উন্নতির বাসনা অত্যন্ত প্রতিহত দেখিয়া এ জাল ছিড়িয়া অন্যান্য জাতির বৃত্তি-অবলম্বনে ধন-সঞ্চয়ে নিযুক্ত, সমাজ তৎক্ষণাৎ তাহদের পৌরোহিত্য-অধিকার কাড়িয়া লইতেছেন। শিখাহীন টেড়িকাটা, অর্ধ-ইউরোপীয় বেশভূষা-আচারাদি-সুমণ্ডিত ব্রাহ্মণের ব্রহ্মণ্যে সমাজ বিশ্বাসী নহেন। আবার— ভারতবর্ষে যেথায় এই নবাগত ইউরোপীয় রাজ্য, শিক্ষা এবং ধনাগমের উপায় বিস্তৃত হইতেছে, সেথায়ই পুরুষানুক্রমাগত পৌরোহিত্য-ব্যবসা পরিত্যাগ করিয়া দলে দলে ব্রাহ্মণযুবকবৃন্দ অন্যান্য জাতির বৃত্তি অবলম্বন করিয়া ধনবান হইতেছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই পুরোহিত-পূর্বপুরুষদের আচার-ব্যবহার একেবারে রসাতলে যাইতেছে । গুর্জরদেশে ব্রাহ্মণজাতির মধ্যে প্রত্যেক অবাস্তর সম্প্রদায়েই দুইটি করিয়া ভাগ আছে—একটি পুরোহিত-ব্যবসায়ী, অপরটি অপর কোন বৃত্তি দ্বারা জীবিকা করে। এই পুরোহিত-ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ই উক্ত প্রদেশে ব্রাহ্মণ নামে অভিহিত এবং অপর সম্প্রদায় একই ব্রাহ্মণকুলপ্রস্থত হইলেও পুরোহিত ব্রাহ্মণেরা তাহদের সহিত যৌন-সম্বন্ধে আবদ্ধ হন না । যথা ‘নাগর ব্রাহ্মণ’ বলিলে উক্ত ব্রাহ্মণজাতির মধ্যে র্যাহারা ভিক্ষাবৃত্ত পুরোহিত, তাহাদিগকেই কেবল বুঝাইবে। ‘নাগর’ বলিলে উক্ত জাতির র্যাহার রাজকর্মচারী বা বৈশুবৃত্ত, তাহাদিগকে বুঝায়। কিন্তু এক্ষণে দেখা যাইতেছে যে, উক্ত প্রদেশসমূহেও এ বিভাগ আর বড় চলে না। নাগর ব্রাহ্মণের পুত্রেরাও ইংরেজী পড়িয়া রাজকর্মচারী হইতেছে, অথবা বাণিজ্যাদি ব্যাপার অবলম্বন করিতেছে। টোলের অধ্যাপকের সকল কষ্ট সহ করিয়া আপনাপন পুত্রদিগকে ইংরেজী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট করাইতেছেন এবং বৈদ্য-কায়স্থাদির বৃত্তি অবলম্বন করাইতেছেন । যদি এই প্রকার স্রোত চলে, তাহা হইলে বর্তমান পুরোহিত-জাতি আর কতদিন এদেশে থাকিবেন, বিবেচ্য বিষয় সন্দেহ নাই। র্যাহারা সম্প্রদায়বিশেষ বা ব্যক্তিবিশেষের উপর ব্রাহ্মণজাতির অধিকার-বিচূতি-চেষ্টারূপ দোষারোপ করেন, তাহাদের জানা উচিত যে, ব্রাহ্মণজাতি প্রাকৃতিক অবশ্যম্ভাবী নিয়মের অধীন হইয়া আপনার সমাধিমন্দির আপনিই নির্মাণ করিতেছেন। ইহাই কল্যাণপ্রদ, প্রত্যেক অভিজাত জাতির স্বহস্তে নিজের চিত নির্মাণ করাই প্রধান কর্তব্য ।