পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: 5 স্বামীজীর বাণী ও রচনা জন্য অর্থাৎ ভারতবর্ষ যে কেবল পক্ষিজাতির ন্যায় আকাশে উড্ডীয়মান, পদভরে জলসঞ্চরণকারী মংস্যামুকারী জলজীবী, মন্ত্রতন্ত্র-ছিটাফোটা-যোগে রোগাপনয়নকারী, সিদ্ধিবলে ধনীদিগের বংশরক্ষক, সুবর্ণাদি-স্থষ্টিকারী সাধুগণের নিবাস-ভূমি, তাহা নহে ; কিন্তু প্রকৃত অধ্যাত্মতত্ত্ববিৎ, প্রকৃত ব্রহ্মবিং, প্রকৃত যোগী, প্রকৃত ভক্ত যে ঐ দেশে একেবারে বিরল ন হন এবং সমগ্র ভারতবাসী যে এখনও এতদূর পশুভাব প্রাপ্ত হন নাই যে, শেষোক্ত নরদেবগণকে ছাড়িয়া পূর্বোক্ত বাজিকরগণের পদলেহন করিতে আপামর-সাধারণ দিবানিশি ব্যস্ত,—ইহাই ইউরোপীয় মনীষিগণকে জানাইবার জন্য ১৮৯৬ খ্ৰীষ্টাব্দের অগস্টসংখ্যক ‘নাইনটিন্থ সেঞ্চুরী’ নামক পত্রিকায় অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার প্রকৃত মহাত্মা’-শীর্ষক প্রবন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণ-চরিতের অবতারণা করেন । ইউরোপ ও আমেরিকার বুধমণ্ডলী অতি সমাদরে এ প্রবন্ধটি পাঠ করেন এবং উহার বিষয়ীভূত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রতি অনেকেই আস্থাবান হইয়াছেন। আর সুফল হইয়াছে কি ?—এই ভারতবর্ষ নরমাংসভোজী, নগ্নদেহ, বলপূর্বক বিধবা-দাহনকারী, শিশুঘাতী, মূৰ্খ, কাপুরুষ, সর্বপ্রকার পাপ ও অন্ধতাপরিপূর্ণ, পশুপ্রায় নরজাতিপূর্ণ বলিয়। পাশ্চাত্য সভ্য জাতির ধারণা করিয়া রাখিয়াছিলেন ; এই ধারণার প্রধান সহায় পাদরী-সাহেবগণ-—ও বলিতে লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, কতকগুলি আমাদের স্বদেশী । এই দুই দলের প্রবল উদ্যোগে যে একটি অন্ধতামসের জাল পাশ্চাত্যদেশ-নিবাসীদের সম্মুখে বিস্তৃত হইয়াছিল, সেইটি ধীরে ধীরে খণ্ড খণ্ড হইয়। যাইতে লাগিল। "যে দেশে শ্ৰীভগবান রামকৃষ্ণের ন্যায় লোকগুরুর উদয়, সে দেশ কি বাস্তবিক যে-প্রকার কদাচারপূর্ণ আমরা শুনিয়া আসিতেছি, সেই প্রকার ? অথবা কুচক্রীরা আমাদিগকে "এতদিন ভারতের তথ্য সম্বন্ধে মহাভ্রমে পাতিত করিয়া রাখিয়াছিল ?—এ প্রশ্ন স্বতঃই পাশ্চাত্য মনে সমুদিত । পাশ্চাত্য জগতে ভারতীয় ধর্ম দৰ্শন-সাহিত্য-সাম্রাজ্যের চক্রবর্তী অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার যখন শ্রীরামকৃষ্ণ-চরিত অতি ভক্তিপ্রবণ হৃদয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার অধিবাসীদিগের কল্যাণের জন্য সংক্ষেপে ‘নাইনটিন্থ সেঞ্চুরীতে প্রকাশ করিলেন, তখন পূর্বোক্ত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ভীষণ অন্তর্দাহ উপস্থিত হইল, তাহ বলা বাহুল্য ।