পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রাবলী '9) : কেহ যদি বলে যে সহিতে সহিতে অভ্যাস হইলে দুঃথকেই মুখ বোধ হইবে ? শঙ্কর এ দিক দিয়ে যান মা—তিনি বলেন, ‘সমাপি অসন্নাপি, ভিন্নাপি অভিন্নাপি'–আছে অথচ নেই, ভিন্ন অথচ অভিন্ন এই যে জগৎ, এর তথ্য আমি জানিব,—দুঃখ আছে কি, কি আছে ; জুজুর ভয়ে আমি পালাই না। আমি জানিব, জানিতে গেলে যে অনস্ত দুঃখ তা তো প্রাণভরে গ্রহণ করিতেছি ; আমি কি পশু যে ইন্দ্রিয়জনিত মুখদুঃখ-জরামরণ-ভয় দেখাও ? আমি জানিব—জানিবার জন্য জান দিব। এ জগতে জানিবার কিছুই নাই, অতএব যদি এই relative-এর (মায়িক জগতের ) পার কিছু থাকে—যাকে শ্ৰীবুদ্ধ প্রজ্ঞাপারম্ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন—যদি থাকে, তাহাই চাই । তাহাতে দুঃখ আসে বা সুখ আসে I do not care ( আমি গ্রাহ করি না ) । কি উচ্চভাব ! কি মহান ভাব ! উপনিষদের উপর বুদ্ধের ধর্ম উঠেছে, তার উপর শঙ্করবাদ । কেবল শঙ্কর বুদ্ধের আশ্চর্ষ heart (হৃদয়) অণুমাত্র পান নাই ; কেবল dry intellect ( শুষ্ক জ্ঞানবিচার )—তন্ত্রের ভয়ে, mob-এর ( ইতরলোকের ) ভয়ে ফোড় সারাতে গিয়ে হাতস্থদ্ধ কেটে ফেললেন, এ সকল সম্বন্ধে লিখতে গেলে পুথি লিখতে হয় ; আমার তত বিদ্যা ও আবশ্বক—দুইয়েরই অভাব। বুদ্ধদেব আমার ইষ্ট, আমার ঈশ্বর। র্তাহার ঈশ্বরবাদ নাই—তিনি নিজে ঈশ্বর, আমি খুব বিশ্বাস করি। কিন্তু ‘ইতি করিবার শক্তি কাহারও নাই। ঈশ্বরেরও আপনাকে Imited ( সীমাবদ্ধ ) করিবার শক্তি নাই। তুমি যে ‘স্বত্তনিপাত হইতে গণ্ডারস্বত্ত তর্জমা লিথিয়াছ, তাহা অতি উত্তম। ঐ গ্রন্থে ঐ প্রকার অার একটি ধনীর স্বত্ত আছে, তাহাতেও প্রায় ঐ ভাব । ‘ধৰ্ম্মপদ’মতেও ঐ প্রকার অনেক কথা আছে। কিন্তু সেও শেষে যখন জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা কূটস্থো বিজিতেন্দ্রিয়? —যাহার শরীরের উপর অণুমাত্র শারীর, বোধ নাই, তিনি মদমত্ত হস্তীর ন্যায় ইতস্ততঃ বিচরণ করিবেন। আমার স্যায় ক্ষুদ্র প্রাণী এক জায়গায় বসিয়া সাধন করিয়া সিদ্ধ হইলে তখন ঐ প্রকার আচরণ করিবে—সে দূর-বড় দূর। ১ গীতা ৬৮