পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বতমান সমস্যা [ ‘উদ্বোধনের প্রস্তাবনা | ভারতের প্রাচীন ইতিবৃত্ত—এক দেবপ্রতিম জাতির অলৌকিক উদ্যম, বিচিত্র ன், অসীম উৎসাহ, অপ্রতিহত শক্তিসংঘাত ও সর্বাপেক্ষা অতি গভীর চিন্তাশীলতায় পরিপূর্ণ। ইতিহাস অর্থাৎ রাজা-রাজড়ার কথা ও তাহাদের কাম-ক্ৰোধ-ব্যসনাদির দ্বারা কিয়ংকাল পরিক্ষুব্ধ, তাহদের স্থচেষ্টাকুচেষ্টায় সাময়িক বিচালিত সামাজিক চিত্র হয়তো প্রাচীন ভারতে একেবারেই নাই । কিন্তু ক্ষুৎপিপাসা-কাম-ক্রোধাদি-বিতাড়িত, সৌন্দর্যতৃষ্ণকৃষ্ট ও মহান অপ্রতিহতবুদ্ধি, নানাভাবপরিচালিত একটি অতি বিস্তীর্ণ জনসজ, সভ্যতার উন্মেষের প্রায় প্রাক্কাল হইতে নানাবিধ পথ অবলম্বন করিয়া যে স্থানে সমুপস্থিত হইয়াছিলেন—ভারতের ধর্মগ্রন্থরাশি, কাব্যসমুদ্র, দর্শনসমূহ ও বিবিধ বৈজ্ঞানিক তন্ত্রশ্রেণী, প্রতি ছত্রে তাহার প্রতি পদবিক্ষেপ, রাজাদিপুরুষবিশেষবর্ণনাকারী পুস্তকনিচয়াপেক্ষ লক্ষগুণ ফুটকৃতভাবে দেখাইয়া দিতেছে। প্রকৃতির সহিত যুগযুগান্তরব্যাপী সংগ্রামে তাহারা যে রাশীকৃত জয়পতাকা সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, আজ জীর্ণ ও বাত্যাহত হইয়াও সেগুলি প্রাচীন, ভারতের জয় ঘোষণা করিতেছে । এই জাতি মধ্য-আসিয়া, উত্তর ইউরোপ বা সুমেরু-সন্নিহিত হিমপ্রধান প্রদেশ হইতে শনৈঃ-পদসঞ্চারে পবিত্র ভারতভূমিকে তীর্থরূপে পরিণত করিয়াছিলেন ব। এই তীর্থভূমিই র্তাহীদের আদিম নিবাস—এখনও জানিবার উপায় নাই । অথবা ভারতমধ্যস্থ বা ভারতবহির্ভূত-দেশবিশেষনিবাসী একটি বিরাট জাতি নৈসর্গিক নিয়মে স্থানভ্রষ্ট হইয়া ইউরোপাদি ভূমিতে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছেন এবং তাহার শ্বেতকায় বা কৃষ্ণকায়, নীলচক্ষু বা কৃষ্ণচক্ষু, কৃষ্ণকেশ বা হিরণ্যকেশ ছিলেন—কতিপয় ইউরোপীয় জাতির ভাষার সহিত সংস্কৃত ভাষার সাদৃশ্ব ব্যতিরেকে, এই সকল সিদ্ধান্তের আর কোনও প্রমাণ নাই । আধুনিক ভারতবাসী তাহদের বংশধর কিনা, অথবা ভারতের কোন জাতি কত পরিমাণে র্তাহীদের শোণিত বহন করিতেছেন, এ সকল প্রশ্নেরও মীমাংসা সহজ নহে ।