পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামীজীর বাণী ও রচনা ל ס\ অনিশ্চিতত্বেও আমাদের বিশেষ ক্ষতি নাই । তবে যে জাতির মধ্যে সভ্যতার উন্মীলন হইয়াছে, যেথায় চিন্তাশীলতা পরিস্ফুট হইয়াছে, সেই স্থানে লক্ষ লক্ষ তাহদের বংশধর-মানসপুত্ৰ— তাহাদের ভাবরাশির, চিন্তারাশির উত্তরাধিকারী উপস্থিত। নদী, পর্বত, সমুদ্র উল্লঙ্ঘন করিয়া, দেশকালের বাধা যেন তুচ্ছ করিয়া, স্থপরিস্ফুট বা অজ্ঞাত অনির্বচনীয় স্বত্রে ভারতীয় চিন্তারুধির অন্য জাতির ধমনীতে পহুছিয়াছে এবং এখনও পহুছিতেছে । হয়তো আমাদের ভাগে সার্বভৌম পৈতৃক সম্পত্তি কিছু অধিক । ভূমধ্যসাগরের পূর্বকোণে সুঠাম সুন্দর দ্বীপমাল-পরিবেষ্টিত, প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য-বিভূষিত একটি ক্ষুদ্র দেশে অল্পসংখ্যক অথচ সর্বাঙ্গসুন্দর, পূর্ণাবয়ব অথচ দৃঢ়স্নাযুপেশীসমন্বিত, লঘুকায় অথচ অটল-অধ্যবসায়-সহায়, পার্থিব সৌন্দর্যস্থষ্টির একাধিরাজ, অপূর্ব ক্রিয়াশীল, প্রতিভাশালী এক জাতি ছিলেন। অন্যান্য প্রাচীন জাতিরা ইহাদিগকে যবন বলিত ; ইহাদের নিজ নাম-গ্রীক । মচুন্য-ইতিহাসে এই মুষ্টিমেয় অলৌকিক বীর্যশালী জাতি এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত । যে দেশে মনুষ্য পার্থিব বিদ্যায়—সমাজনীতি, যুদ্ধনীতি, দেশশাসন, ভাস্কর্যাদি শিল্পে—অগ্রসর হইয়াছেন বা হইতেছেন, সেই স্থানেই প্রাচীন গ্রীসের ছায়। পড়িয়াছে। প্রাচীন কালের কথা ছাড়িয় দেওয়া যাউক, আমরা আধুনিক বাঙ্গালী—আজ অর্ধশতাব্দী ধরিয়া ঐ যবন গুরুদিগের পদানুসরণ করিয়৷ ইউরোপীয় সাহিত্যের মধ্য দিয়া তাহীদের যে আলোটুকু আসিতেছে, তাহারই দীপ্তিতে আপনাদিগের গৃহ উজ্জ্বলিত করিয়া স্পর্ধ অহুভব করিতেছি। সমগ্র ইউরোপ আজ সর্ববিষয়ে প্রাচীন গ্রীসের ছাত্র এবং উত্তরাধিকারী ; এমন কি, একজন ইংলণ্ডীয় পণ্ডিত বলিয়াছেন, “যাহা কিছু প্রকৃতি স্থষ্টি করেন নাই, তাহা গ্ৰীক মনের স্বষ্টি ’ স্বরস্থিত বিভিন্নপর্বত-সমুৎপন্ন এই দুই মহানদীর মধ্যে মধ্যে সঙ্গম উপস্থিত হয় ; এবং যখন ঐ প্রকার ঘটনা ঘটে, তখনই জনসমাজে এক মহা আধ্যাত্মিক তরঙ্গে উত্তোলিত সভ্যতা-রেখা মুদূর-সম্প্রসারিত [ হয় ] এবং মানবমধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন দৃঢ়তর হয়।