পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శీూ8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা অসম্ভব এবং মূলাচ্ছেদকারী বিজাতীয় ঢঙের অনুকরণ করিতে যাইয়া আমরা ‘ইত্যেনষ্টস্ততোভষ্ট: হইয়া যাই । এই জন্য ঘরের সম্পত্তি সর্বদা সম্মুখে রাখিতে হইবে ; যাহাতে আসাধারণ সকলে তাহদের পিতৃধন সর্বদা জানিতে ও দেখিতে পারে, তাহার প্রযত্ন করিতে হইবে ও সঙ্গে সঙ্গে নিৰ্ভীক হইয়া সর্বদ্বার উন্মুক্ত করিতে হইবে । আস্থক চারিদিক হইতে রশ্মিধারা, আত্নক তীব্র পাশ্চাত্য কিরণ । যাহা দুর্বল দোষযুক্ত, তাহা মরণশীল—তাহ লইয়াই বা কি হইবে ? যাহা বীর্যবান বলপ্রদ, তাহ অবিনশ্বর ; তাহার নাশ কে করে ? কত পর্বতশিখর হইতে কত হিমনদী, কত উৎস, কত জলধারা উচ্ছসিত হইয়া বিশাল স্থর-তরঙ্গিণীরূপে মহাবেগে সমুদ্রাভিমুখে যাইতেছে। কত বিভিন্ন প্রকারের ভাব, কত শক্তিপ্রবাহ–দেশদেশাস্তর হইতে কত সাধুহৃদয়, কত ওজস্ব মস্তিষ্ক হইতে প্রস্থত হইয়া নর-রঙ্গক্ষেত্র কর্মভূমি—ভারতবর্ষকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতেছে। লৌহবত্বা-বাপপোতবাহন ও তড়িৎসহায় ইংরেজের আধিপত্যে বিদ্যুদ্বেগে নানাবিধ ভাব—রীতিনীতি দেশমধ্যে বিস্তীর্ণ হইয় পড়িতেছে। অমৃত আসিতেছে; সঙ্গে সঙ্গে গরলও আসিতেছে ; ক্ৰোধকোলাহল, রুধিরপাতাদি সমস্তই হইয়া গিয়াছে—ঐ তরঙ্গরোধের শক্তি হিন্দুসমাজে নাই। যন্ত্রোদ্ধত জল হইতে মৃতজীবাস্থি-বিশোধিত শর্কর পর্যন্ত সকলই বহু-বাগাড়ম্বরসত্ত্বেও নিঃশব্দে গলাধঃক্লত হইল ; আইনের প্রবল প্রভাবে ধীরে ধীরে, অতি যত্বে রক্ষিত রীতিগুলিরও অনেকগুলি ক্রমে ক্রমে খসিয়া পড়িতেছে,—রাথিবীর শক্তি নাই । নাই বা কেন ? সত্য কি বাস্তবিক শক্তিহীন ? "সত্যমেব জয়তে মানুতম্’-এই বেদবণী কি মিথ্যা ? অথবা যেগুলি পাশ্চাত্য রাজশক্তি বা শিক্ষণশক্তির উপপ্লাবনে ভাসিয়া যাইতেছে, সেই আচারগুলিই অনাচার ছিল ? ইহাও বিশেষ বিষ্কারের বিষয় । ‘বহুজনহিতায় বহুজনমুখায় নিঃস্বার্থভাবে ভক্তিপূর্ণহৃদয়ে এই সকল প্রশ্নের মীমাংসার জন্য উদ্বোধন সহৃদয় প্রেমিক বুধমণ্ডলীকে আহবান করিতেছে এবং দ্বেষ-বুদ্ধিবিরহিত ও ব্যক্তিগত বা সমাজগত বা সম্প্রদায়গত কুবাক্যপ্রয়োগে বিমুখ হইয়া সকল সম্প্রদায়ের সেবার জন্যই আপনার শরীর অর্পণ করিতেছে। কার্যে আমাদের অধিকার, ফল প্রভুর হস্তে ; আমরা কেবল বলি—হে ওজঃস্বরূপ ! আমাদিগকে ওজস্বী কর ; হে বীর্যস্বরূপ ! আমাদিগকে বীর্যবান কর ; হে বলস্বরূপ ! আমাদিগকে বলবান কর।