পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8 с স্বামীজীর বাণী ও রচনা অবস্থাভেদ, উপায়ের অবস্থাতুযায়ী প্রয়োজনভেদ ; বাস্তবিক সেই এক অখণ্ড জ্ঞান ব্রহ্মাদিস্তম্ব পর্যন্ত ব্ৰহ্মাণ্ড-পরিব্যাপ্ত । 鬱 ‘জ্ঞান-মাত্রেই পুরুষবিশেষের দ্বারা অধিকৃত এবং ঐ সকল বিশেষ পুরুষ, ঈশ্বর বা প্রকৃতি বা কর্মনির্দিষ্ট হইয়া যথাকলে জন্মগ্রহণ করেন, তদ্ভিন্ন কোনও বিষয়ে জ্ঞানলাভের আর কোন উপায় নাই—এইটি স্থির সিদ্ধান্ত হইলে সমাজ হইতে উদ্যোগ-উৎসাহাদি অন্তৰ্হিত হয়, উদ্ভাবনী শক্তি চর্চাভাৰে ক্রমশঃ বিলীন হয়, নূতন বস্তুতে আর কাহারও আগ্রহ হয় না, হইবার উপায়ও সমাজ ক্রমে বন্ধ করিয়া দেন। যদি ইহাই স্থির হইল যে, সর্বজ্ঞ পুরুষবিশেষগণের দ্বারায় মানবের কল্যাণের পন্থা অনন্তকালের নিমিত্ত নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহা হইলে সেই সকল নির্দেশের রেখামাত্র ব্যতিক্রম হইলেই সর্বনাশ হইবার ভয়ে সমাজ কঠোর শাসন দ্বারা মনুষ্যগণকে ঐ নির্দিষ্ট পথে লইয়া যাইতে চেষ্টা করে। যদি সমাজ এ বিষয়ে কৃতকার্য হয়, তবে মল্লুস্থ্যের পরিণাম যন্ত্রের ন্যায় হইয়া যায় । জীবনের প্রত্যেক কার্যই যদি অগ্র হইতে স্বনির্দিষ্ট হইয়া রহিয়াছে, তবে চিন্তাশক্তির পর্যালোচনার আর ফল কি ? ক্রমে ব্যবহারের অভাবে উদ্ভাবনী-শক্তির লোপ ও তমোগুণপূর্ণ জড়ত আসিয়া পড়ে ; সে সমাজ ক্রমশই অধোগতিতে গমন করিতে থাকে। অপরদিকে সর্বপ্রকারে নির্দেশবিহীন হইলেই যদি কল্যাণ হইত, তাহ হইলে চীন, হিন্দু, মিশর, বাবিল, ইরান, গ্রীস, রোম ও তাঁহাদের বংশধরদিগকে ছাড়িয়া সভ্যতা ও বিদ্যাত্র জুলু, কাফ্রি, হটেন্টটু, সাওঁতাল, আন্দামানি ও অষ্ট্রেলিয়ান প্রভৃতি জাতিগণকেই আশ্রয় করিত । অতএব মহাপুরুষদিগের দ্বারা নির্দিষ্ট পথেরও গৌরব আছে, গুরুপরম্পরাগত জ্ঞানেরও বিশেষ বিধেয়তা আছে, জ্ঞানের সর্বাস্ত্যামিত্বও একটি অনন্ত সত্য। কিন্তু বোধ হয়, প্রেমের উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হইয়া ভক্তেরা মহাজনদিগের অভিপ্রায়—তাহীদের পূজার সমক্ষে বলিদান করেন এবং স্বয়ং হতশ্ৰী হইলে মনুস্থ স্বভাবতঃ পূর্বপুরুষদিগের ঐশ্বৰ্ষ স্মরণেই কালাতিপাত করে, ইহাও প্রত্যক্ষসিদ্ধ। ভক্তিপ্রবণ হৃদয় সর্বপ্রকারে পূর্বপুরুষদিগের পদে আত্মসমপণ করিয়া স্বয়ং দুর্বল হইয়া যায় এবং পরবর্তী কালে ঐ দুর্বলতাই শক্তিহীন গর্বিত হৃদয়কে পূর্বপুরুষদিগের গৌরব-ঘোষণারূপ জীবনধার-মাত্র অবলম্বন করিতে শিখায় ।