পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br স্বামীজীর বাণী ও রচনা জম্বুদ্বীপ হইতে কেবল দুই-তিনজন জাপানী পণ্ডিত আসিয়াছিলেন ; ভারতবর্ষ হইতে স্বামী বিবেকানন্দ । - বৈদিক ধর্ম—অগ্নি স্বর্যাদি প্রাকৃতিক বিস্ময়াবহ জড়বস্তুর আরাধনা-সমুদ্ভূত, এইটি অনেক পাশ্চাত্য সংস্কৃতজ্ঞের মত । স্বামী বিবেকানন্দ উক্ত মত খণ্ডন করিবার জন্য ‘পারি ধর্মেতিহাস-সভা’ কর্তৃক আহূত হইয়াছিলেন এবং তিনি উক্ত বিষয়ে এক প্রবন্ধ পাঠ করিবেন, প্রতিশ্রুত ছিলেন । কিন্তু শারীরিক প্রবল অনুস্থতানিবন্ধন তাহার প্রবন্ধাদি লেখা ঘটিয়া উঠে নাই ; কোনমতে সভায় উপস্থিত হইতে পারিয়াছিলেন মাত্র। উপস্থিত হইলে ইউরোপ অঞ্চলের সকল সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতই তাহাকে সাদরে অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন ; উহার ইতিপূর্বেই স্বামীজীর রচিত পুস্তকাদি পাঠ করিয়াছিলেন। সে সময় উক্ত সভায় ওপর্ট নামক এক জার্মান পণ্ডিত শালগ্রাম-শিলার উৎপত্তি সম্বন্ধে এক প্রবন্ধ পাঠ করেন । তাহাতে তিনি শালগ্রামের উৎপত্তি ‘যোনি’-চিহ্ন বলিয়া নির্ধারিত করেন ৷ ‘ তাহার মতে শিবলিঙ্গ পুংলিঙ্গের চিহ্ন এবং তদ্বং শালগ্রাম-শিলা স্ত্রীলিঙ্গের চিহ্ন । শিবলিঙ্গ এবং শালগ্রাম উভয়ই লিঙ্গ যোনিপূজার অঙ্গ । স্বামী বিবেকানন্দ উক্ত মতদ্বয়ের খণ্ডন করিয়া বলেন যে, শিবলিঙ্গের মরলিঙ্গতা সম্বন্ধে অবিবেক মত প্রসিদ্ধ আছে ; কিন্তু শালগ্রাম সম্বন্ধে এ নবীন মত অতি আকস্মিক । স্বামীজী বলেন যে, শিবলিঙ্গ পূজার উৎপত্তি অথর্ববেদসংহিতার যুপ স্তম্ভের প্রসিদ্ধ স্তোত্র হইতে । উক্ত স্তোত্রে অনাদি অনন্ত স্তম্ভের অথবা স্কম্ভের বর্ণনা আছে এবং উক্ত স্কম্ভই যে ব্রহ্ম, তাহাই প্রতিপাদিত হইয়াছে । যজ্ঞের অগ্নি, শিখা, ধূম, ভস্ম, সোমলতা ও যজ্ঞকাষ্ঠের বাহক বৃষ যে প্রকার মহাদেবের অঙ্গকান্তি, পিঙ্গল জটা, নীলকণ্ঠ, ও বাহনাদিতে পরিণত হইয়াছে, সেই প্রকার যুপ-স্কন্তও শ্ৰীশঙ্করে লীন হইয়া মহিমান্বিত হইয়াছে। অথর্বৱেদসংহিতায় তদ্বং যজ্ঞোচ্ছিষ্টেরও ব্রহ্মত্ব-মহিমা প্রতিপাদিত হইয়াছে । লিঙ্গাদি পুরাণে উক্ত স্তবকেই কথাচ্ছলে বর্ণনা করিয়া মহাস্তম্ভের মহিম। ও শ্রীশঙ্করের প্রাধান্য ব্যাখ্যাত হইয়াছে ।